হাদিসে আছে সূর্য আরশের নিচে সিজদাহ করে। সুতরাং এটা অবোইজ্ঞানিক। (জবাব-২)

Posted by Adam Simon  |  No comments

সূর্য আরশের নিচে যেয়ে সেজদা দেয়!
সহী বুখারীর একটি হাদীস নিয়ে আমাদের মুক্তমনা সমাজের নাস্তিকরা প্রায়ই ধোঁয়াশা তৈরির চেষ্টা করে থাকে। তাদের দাবি হচ্ছে, এই হাদীসটি সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। যেহেতু বুখারীর মতো প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে এটির উল্লেখ পাওয়া যায়, আর হাদীস শাস্ত্রে বুখারীর মান যেহেতু সবার উর্ধ্বে, এবং মুসলিমরা যেহেতু এটাতে বিশ্বাস করে, তাই ইসলাম এবং মুসলিমদের উপহাস সুযোগ তারা ছাড়ে না।
বাংলাদেশের মুক্তোমনা নামধারী ইসলাম বিদ্বেষীদের কথাবার্তা আর লেখাযোখা পড়লে মনে হয় এরা একেকজন ইসলাম, কোরআন, হাদীসের উপরে পিএইচডি করে ফেলেছে।
আসল ব্যাপার হলো, কোরআন-হাদীস নিয়ে এদের জ্ঞান একেবারে শূন্যের কোঠায়। বলা চলে, এদের শতকরা ৯৯ ভাগ আরবি পড়তেই জানেনা।
তাহলে এরা সমালোচনা কীভাবে করে??
যাহোক, মূল আলোচনায় ফিরে আসি। আমরা প্রথমে হাদীসটা দেখে নিই। হাদীসটি আছে বুখারী শরীফের চতুর্থ খন্ডের ৫৪ নাম্বার অধ্যায়ে। হাদীস নাম্বার হচ্ছে ৪২১।
হজরত আবু যা’র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,- “রাসূল (সাঃ) আমার কাছে জিজ্ঞেস করলেন,- তুমি কী জানো (সূর্যাস্তের সময়) সূর্য কোথায় যায়?”
আমি বললাম,- “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ভালো জানেন”। তখন তিনি বললেন,- ‘এটা (নির্দিষ্ট পথে চলতে চলতে) আল্লাহর আরশের নিচে এসে সিজদা করে এবং উদয় হবার জন্য অনুমতি চায় এবং এটাকে অনুমতি দেওয়া হয়। এমন একটা সময় আসবে যেদিন এটাকে আর অনুমতি দেওয়া হবেনা (পূর্বদিক থেকে উদিত হবার জন্য) এবং এটাকে যেদিক থেকে এসেছে সেদিকে ফিরে যেতে বলা হবে। সেদিন এটা (সূর্য) পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে”।
এখান থেকে যে প্রশ্নগুলো তারা করার চেষ্টা করে তা হলো নিম্নরূপঃ
১/ বলা হচ্ছে, সূর্য আল্লাহর আরশের নিচে যায়। আমরা জানি, সূর্য তার নিজ কক্ষপথেই থাকে, কোথাও যায় না। তাহলে এইটা কীভাবে সম্ভব যে, সূর্য আরশের নিচে যায়?
২/ সূর্য কীভাবে সিজদা করতে পারে? এই প্রশ্নের সাথে সম্পূরক প্রশ্ন হচ্ছে,- সিজদা করতে হলে সূর্যকে তার কাজ (ঘূর্ণন) থামাতে হবে। জোতির্বিজ্ঞান বলছে, সূর্য নিজ কক্ষপথে অবিরত ঘূর্ণন অবস্থায় থাকে। তাহলে সূর্য সিজদাটাই বা করে কখন আর অনুমতিটাই বা পায় কখন?
এই ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হবার জন্য দেখতে হবে মুসলীম শরীফের একটি হাদীস ৷
আবূ যার (রাযিঃ) বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা কি জান, এ সূর্য কোথায় যায়? সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, এ সূর্য চলতে থাকে এবং (আল্লাহ তা'আলার) আরশের নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সাজদাবনত হয়ে পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও! অনন্তর সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল দিয়েই উদিত হয়। তা আবার চলতে থাকে এবং আরশের নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সাজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয় উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল হয়েই সে উদিত হয়। এমনিভাবে চলতে থাকবে; মানুষ তার থেকে অস্বাভাবিক কিছু হতে দেখবে না। শেষে একদিন সূর্য যথারীতি আরশের নীচে তার অবস্থানে যাবে। তাকে বলা হবে, উঠ এবং অস্তাচল থেকে উদিত হও। অনন্তর সেদিন সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হবে। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=47046

দেখুন এখানে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে, " তার অবস্থান স্থলে যায় " অর্থাত তার জন্য নির্ধারিত স্থানে যাবার পর সে সেজদায় পড়ে অনুমতি প্রার্থনা করতে থাকে ৷ বলা হয়নি " সেজদা দিয়ে থেমে থাকে বরং সেজদায় পড়ে থাকে বলা হয়েছে ৷
এখন প্রথমে এক নাম্বার প্রশ্নটা নিয়ে ভাবা যাক। এটার উত্তর জানার জন্য আমাদেরকে আগে জানতে হবে আল্লাহর আরশ কোথায়। আল কোরআন এবং সহী হাদীস থেকে জানা যায় যে, আল্লাহর আরশ হচ্ছে সবকিছুর উর্ধ্বে। অর্থাৎ, দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান (পৃথিবী, আকাশ, গ্যালাক্সি, পদার্থ) এই মহাবিশ্বের সবকিছুর উপরে আল্লাহর আরশ অবস্থিত। এই “সবকিছুর” মধ্যে কিন্তু সূর্যও পড়ে। সুতরাং, সূর্য নিজেই আলটিমেটলি আল্লাহর আরশের নিচেই আছে। আল্লাহর আরশের নিচে যাওয়ার জন্য সূর্যকে আলাদাভাবে তার কক্ষপথ ছাড়তে হয়না। নিজ কক্ষপথে থেকেই সূর্য আল্লাহর আরশের নিচে তার জন্য নির্ধারিত স্থানে যেয়ে সেজদা দেয় ৷
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, সূর্য কীভাবে সিজদা করতে পারে?
হাত-পা মাটিতে রেখে, মাথা-নাক-কপাল মাটিতে স্পর্শ করাই হলো আমাদের সিজদার পদ্ধতি।
সূর্যের কী হাত-পা আছে? নাক-কপাল আছে? যদি না থাকে, তাহলে সূর্য সিজদা কীভাবে দেয়?
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন
15] وَلِلَّهِ يَسجُدُ مَن فِى السَّمٰوٰتِ وَالأَرضِ طَوعًا وَكَرهًا وَظِلٰلُهُم بِالغُدُوِّ وَالءاصالِ ۩
[15] আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে আছে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের প্রতিচ্ছায়াও সকাল-সন্ধ্যায়।
(সূরা রাদ)
49] وَلِلَّهِ يَسجُدُ ما فِى السَّمٰوٰتِ وَما فِى الأَرضِ مِن دابَّةٍ وَالمَلٰئِكَةُ وَهُم لا يَستَكبِرونَ
[49] আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে আছে এবং যা কিছু ভুমন্ডলে আছে এবং ফেরেশতাগণ; তারা অহংকার করে না।
(সূরা নাহল)
দেখুন এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে সকল কিছুই সেজদা দেয় ৷ গাছ, লতা - পাতা, চন্দ্র, সূর্য সব কিছুই এর আওতায় পরে ৷
আচ্ছা, গাছ কি আমাদের মত কোমর বাকিয়ে সেজদা দেয়??? মূলত প্রত্যেকের সেজদার পদ্ধতি ভিন্ন ৷
যেমন ধরুন, মানুষ অসুস্থ হলে দাড়িয়ে, বসে এমনকি ঘুমিয়ে সেজদা দিতে পারে ৷যদি চলন্ত গাড়িতে থাকে তবুও সেজদা দেবার অনুমতি রয়েছে ৷ ঠিক তেমনি ভাবে গাছ-পালা নিজ অবস্থানে থেকেই সেজদা দেয় এবং সূর্য না থেমেই চলতে চলতে সেজদা দিয়ে থাকে ৷ তাকে সেজদার জন্য থামতে হয় না ৷
সিজদা মানে আমরা কী বুঝি? কারো কাছে বিনত হওয়া, অবনত হওয়া, অনুগত হওয়া। আরো অর্থ করা যায়, যেমন- রুলস মেনে চলা , নিয়মাধীন হওয়া ইত্যাদি।
তাহলে, বুঝা গেলো , সূর্যের সিজদা আর আমাদের সিজদা এক নয় ৷ সূর্য চলতে চলতে তার জন্য নির্ধারিত স্থানে যেয়ে সেজদায় পড়ে চলার অনুমতি প্রার্থনা করে এবং অনুমতি পাবার মাধ্যমে নিজ কক্ষ পথে চলমান রয়েছে ৷


উত্তর দিয়েছেন
চয়ন চৌধুরী

14:00 Share:
About Naveed Iqbal

Nulla sagittis convallis arcu. Sed sed nunc. Curabitur consequat. Quisque metus enim venenatis fermentum mollis. Duis vulputate elit in elit. Follow him on Google+.

0 komentar:

Get updates in your email box
Complete the form below, and we'll send you the best coupons.

Deliver via FeedBurner

Labels

Contact Form

Name

Email *

Message *

Text Widget

Recent News

About Us

Your Ads Here
back to top