যার কাছে নিজের প্রশংসা খুব প্রিয় এবং যিনি নিজের প্রশংসা নিজে করেন তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ হন কিভাবে?

Posted by Adam Simon  |  No comments

উত্তর দিয়েছেন

ভাই নয়ন চৌধুরী    (Nayan Chowdhury)



প্রশ্নঃ
যে নিজের প্রশংসা নিজে করে এবং যে নিজের প্রশংসা শুনলে আবার খুশিও হয় তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ হন কিভাবে?

জবাবঃ-

আমরা যার ইবাদত করি তার সম্পর্কে জানা আমাদের খুব বেশী দরকার। যার সম্পর্কে জানি না তার ইবাদত কিভাবে করবেন?
আমরা যদি কোরআন এর আয়াত গুলো দেখি তাহলে দেখতে পাই আল্লাহ্‌ নিজের পরিচয় প্রদান করেছেন। মূলত এই পরিচয় প্রদান অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও যুক্তিসংগত।


যে স্বত্বাকে আমারা দেখিনি তার পরিপূর্ণ পরিচয় না পেয়ে কি সন্দেহাতীত আনুগত্য করা আদৌ সম্ভব?

কখনোই না। এজন্যই আল্লাহ্‌ সুবহানুতায়ালা কোরআনুল করিমে নিজের পরিচয় বিস্তারিতভাবে দিয়েছেন আর একেই নাস্তিকরা নিজের প্রশংসা নিজে করছেন বলে অপপ্রচার করছে।
তাহলে দেখুন আল্লাহ্‌ কিভাবে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন-
******************************************-*********

আল্লাহর পরিচয়ঃ
*********************
আল্লাহর পরিচয়ের সবচেয়ে আমার পছন্দের আয়াতগুলো হল- সূরা ইখলাসের ৪টি আয়াত। এই আয়াতগুলো দিয়ে আল্লাহ তার পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন।
বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। (১১২ : ১-৪)
আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি কারও উপর নির্ভর করেন না। কারও মুখাপেক্ষী হতে হয় না। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। তার সাথে তুলনা করার মত কিছুই নেই। এমন একজন সত্ত্বা হলেন আল্লাহ।
মহান আল্লাহর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে ‘আয়াতুল কুরসি’তে।
সেখানে বলা হয়েছে :
-----------------------------------
‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা আছে, সব কিছু তাঁরই। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের (সৃষ্টিজগতের) সামনে ও পেছনে যা আছে, তিনি সব কিছু সম্পর্কে অবগত। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো অংশই তারা (সৃষ্টিজগৎ) আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত। তাদের (সৃষ্টিজগতের) রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। আর তিনিই মহান, শ্রেষ্ঠ। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৫)


এখানে কি আল্লাহর পরিচয় প্রকাশ ছাড়া আর কিছু আছে?
মূলত যে স্রষ্টাকে আমরা কখনো দেখিনি, চর্ম চক্ষু যাকে দেখতে পারেনা সেই স্রষ্টার পরিপূর্ণ পরিচয় না পেলে কি তার প্রতি সন্দেহাতীত আনুগত্য প্রকাশ করা সম্ভব?
কখনোই না!!
আর এজন্যই আল্লাহ্‌ নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছেন আমাদেরকে সঠিকভাবে তার সম্পর্কে ধারনা দেয়ার জন্য। এটা অবশ্যই যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিক।


অথচ এটা নিয়েই নাস্তিকদের যত মিথ্যাচার।
এবার আসাযাক আল্লাহ্‌ কেমন প্রশংসা করতে বলেছেনঃ-
******************************************************
মহান আল্লাহ বলেছেন, فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ
“তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর কৃতঘ্ন হয়ো না।” (সূরা বাকারা ১৫২ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন, لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
“তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দান করব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর।” (সূরা ইব্রাহীম ৭ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন, وَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ
“বল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই।” (সূরা ইসরা ১১১ আয়াত)
তিনি আরও বলেছেন, وَآخِرُ دَعْوَاهُمْ أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
“তাদের শেষ বাক্য হবে, আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন (সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য)।” (সূরা ইউনুস ১০ আয়াত)


এখানে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ্‌ আমাদের তার নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য এবং অকৃতজ্ঞ না হওয়ার জন্য বলছেন।
নেয়ামতের শুকরিয়া সে তো নেয়ামত দাতার অনুগ্রহের স্বীকৃতি দানমাত্র। যা হয়ে থাকে আপন ইচ্ছায় দাতার উপর সন্তুষ্টি ও ভালবাসা প্রকাশের জন্য। আর আল্লাহর প্রতি বিনয়ী হওয়ার নিদর্শন মাত্র। মানব অন্তরে এমন দৃঢ়বিশ্বাস থাকা আবশ্যক যে, আমি অধম এতসব নেয়ামত পাওয়ার উপযুক্ত নয়। বরং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে দয়া পরশ হয়ে আমার উপর ইহসান ও অনুকম্পা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন। আর এই নেয়ামত মুখের ভাষা দ্বারা প্রকাশ এবং কর্মের মাধ্যমে এর বাস্তবরূপ দান করা প্রত্যেক বান্দার উপর অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। নেয়ামত পেয়ে বিনম্র হওয়া, নিজ অক্ষমতা অনুধাবন করা, নেয়ামতকে সঠিক পাত্রে ব্যবহার করা এবং যথাযথ এর মর্যাদা রক্ষা করা আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালবাসা প্রকাশের আরেক দৃষ্টান্ত।
প্রশ্ন হচ্ছে--- এটা কি অযৌক্তিক?


আল্লাহ অলরেডিই মহানঃ-
***************************
ধরুন কেউ বললো আল্লাহু আকবার বা আল্লাহ মহান তার মানে এই নয় আল্লাহ তার প্রশংসার কারনে আরো মহান হয়ে গেলেন আল্লাহ অলরেডিই মহান যতই তাকে প্রশংসা করা হোক বা না হোক তিনি মহামহিম আছেন ছিলেন ও থাকবেন। আপনি তারঁ সমুদয় লাভের জন্য প্রশংসা করছেন না। আল্লাহ বলেন –
‘‘হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর গলগ্রহ। আর আল্লাহ্; তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।’’ সুরা ফাতির-৩৫, আয়াত-১৫


আল্লাহর প্রশংসা কেন করবঃ
****************************
তারঁ প্রশংসা করা প্রয়োজন আমাদের লাভের জন্য।
আল্লাহ সমস্ত চাওয়া-পাওয়া থেকে মুক্ত। তারঁ প্রশংসা করা প্রয়োজন আমাদের লাভের জন্য। আপনি এমন কারো সম্মান করবেন যে সর্বজ্ঞ, অত্যন্ত সুক্ষদর্শী ও সব কিছু যার আয়ত্বাধীন, তারঁ প্রশংসা করে আপনি নিজেকে সন্তুষ্ট করবেন। এজন্যই প্রত্যেক মুসলমান প্রতি নামাযের শুরুই করে তাকে মর্যাদাসূচক উক্তি করে।



সবশেষে বলবঃ-
***************
পৃথিবীর সবাই অকৃতজ্ঞ হলেও আল্লাহর কোনো ক্ষতি নেইঃ
****************-*********-******************************
. মুসা বলেছিল, তোমরা ও পৃথিবীর সবাই যদি অকৃতজ্ঞ হও, তথাপি আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত। (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৮)
তাফসিরঃ
আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা হলে তিনি তাঁর অনুগ্রহ বৃদ্ধি করে দেন। আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, কৃতজ্ঞতা ও অকৃতজ্ঞতার প্রতিফল মানুষই পাবে। এতে আল্লাহর কোনো লাভ বা ক্ষতি নেই। গোটা পৃথিবীর মানুষ আল্লাহর অকৃতজ্ঞ হলেও তাঁর কোনো ক্ষতি নেই। একইভাবে গোটা পৃথিবীর মানুষ আল্লাহর কৃতজ্ঞ হলেও তাঁর কোনো লাভ নেই।


পৃথিবীতে মুসলিম ও অমুসলিম তথা মুমিন ও কাফির থাকবেই। কিন্তু কেউ যদি ঈমান আনে, তাহলে এর সুফল সে-ই ভোগ করবে। একইভাবে কেউ যদি কুফরি করে, তাহলে এর প্রতিফলও তাকে পেতে হবে। এতে আল্লাহর কোনো লাভ বা ক্ষতি নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘...কেউ কুফরি করলে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন।
’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)
অমুখাপেক্ষিতা আল্লাহ তাআলার বিশেষ গুণ। মুখাপেক্ষীহীন কোনো মানুষ নেই। প্রাকৃতিক নিয়মেই মানুষকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হয়নি। এর কারণ হলো, মানুষ অমুখাপেক্ষী হলে অন্যের লাভ-লোকসান ও সুখ-দুঃখের প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করত না। তারা অন্যের প্রতি অত্যাচার, অবিচার ও উত্পীড়নের পথ বেছে নিত।
সাধারণত দেখা যায়, একটু ক্ষমতা লাভ করলেই মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে।


এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
‘মানুষ যখন নিজেকে অমুখাপেক্ষী দেখতে পায় তখন সে অবাধ্যতা ও ঔদ্ধত্যে মেতে ওঠে। ’ (সুরা : আলাক, আয়াত : ৬-৭)।
তাই আল্লাহ তাআলা মানুষের জীবনধারা এমন প্রয়োজনাদির শিকলে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দিয়েছেন, যেগুলো অন্যের সাহায্য ছাড়া পূর্ণ হতে পারে না। প্রবল প্রতাপান্বিত রাজা-বাদশাহরাও চাকর-চাকরানির মুখাপেক্ষী। বিত্তশালী ও কলকারখানার মালিকরাও শ্রমিকদের মুখাপেক্ষী।


শহুরে মানুষ গ্রাম্য কাঁচামাল ও পণ্যের মুখাপেক্ষী। অনুরূপ গ্রাম্য মানুষও শহরের পণ্যাদির মুখাপেক্ষী। এরূপ না হলে কোনো ধনী ব্যক্তি কাউকে এক পয়সারও মূল্য দিত না, আর কোনো শ্রমিক কারো বোঝা বহন করত না।


কিন্তু মহান আল্লাহ অমুখাপেক্ষী হয়েও সৃষ্টিজগতের ওপর দয়াশীল।
কোরআনে এসেছে
, ‘তোমার প্রতিপালক অমুখাপেক্ষী, দয়াশীল। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে উচ্ছেদ করতে এবং তোমাদের পর যাকে ইচ্ছা তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন, যেমন তোমাদের তিনি অন্য এক জাতির বংশধর থেকে সৃষ্টি করেছেন। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৩৩)


মহান আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও মহাপরাক্রমশালী। অক্ষমতা ও দুর্বলতা তাঁর ক্ষেত্রে অকল্পনীয়। তাঁর কোনো অভাব নেই। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। সব কিছুই তাঁর সৃষ্টি। তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা। মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে তাঁর সত্তাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।
আল্লাহ্‌ তার স্বত্বাকে উপলব্ধি করার এবং তাঁর শোকরিয়া আদায় করার সৌভাগ্য ও তৌফিক আমাদের দান করুন,আমিন।

12:00 Share:
About Naveed Iqbal

Nulla sagittis convallis arcu. Sed sed nunc. Curabitur consequat. Quisque metus enim venenatis fermentum mollis. Duis vulputate elit in elit. Follow him on Google+.

0 komentar:

Get updates in your email box
Complete the form below, and we'll send you the best coupons.

Deliver via FeedBurner

Labels

Contact Form

Name

Email *

Message *

Text Widget

Recent News

About Us

Your Ads Here
back to top