" কূন বা হও " শব্দটি কি কোরআনকে ভুল প্রতিপন্ন করেছে??
কু’রআনে আল্লাহ বলেছেন
117] بَديعُ السَّمٰوٰتِ وَالأَرضِ ۖ وَإِذا قَضىٰ أَمرًا فَإِنَّما يَقولُ لَهُ كُن فَيَكونُ
[117] তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবক। যখন তিনি কোন কার্য সম্পাদনের সিন্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে একথাই বলেন, ‘হয়ে যাও’ তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়।
[আল-বাক্বারাহ ১১৭]
এই আয়াত পড়ে নাস্তিকদের লাফালাফি যেন বানরকে হার মানায় ৷ তাদের কথা হল, যদি "হও" বললেই হয়ে যায় তবে বিশ্বজগত বানাতে 6 দিন লাগল কেন?
এই আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে নাস্তিকরা কোরআনকে ভুল প্রমাণ করতে চায় ৷
এই আয়াত পড়ে অনেকে ভাবেন, কিছু সৃষ্টি করার আগে আল্লাহ হয়তো আরবিতে উচ্চারণ করেন, ‘কুন’, কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। এখানে ‘কুন’ বলাটা একটি প্রতীক মাত্র।
আবার অনেকে মনে করেন যে, তিনি কোনো কিছুকে ‘হও’ বললেই সেটা আমাদের দৃষ্টিতেও সাথে সাথে ঘটে যায়। ব্যাপারটা তা নয়। কোনো কিছুকে ‘হও’ বলাটা আমাদের জানা বাস্তবতার বাইরে ঘটে। সেটি কোনো স্থান-কালের মধ্যে ঘটে না। কিন্তু তাঁর আদেশের বাস্তবায়ন যখন আমাদের পরিচিত স্থান-কালের মধ্যে ঘটে, তখন সেটা স্থান-কালের গণ্ডির মধ্যেই ঘটে।
আমরা জানি যে সমগ্র কোরআনে "কূন বা হও " শব্দটি আটবার এসেছে ৷ যদি আমরা পর্যালোচনা করি তবে এই শব্দের কার্যক্রম কিভাবে হয় তা ভাল ভাবে উপলব্ধি করতে পারব ৷
সূরা নাহলের ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَنْ نَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ (40)
“আমি যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করি; তখন তাকে কেবল এতটুকুই বলি যে, হয়ে যাও। সুতরাং তা হয়ে যায়।" (১৬:৪০)
এই আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি শুধু বলেন ‘হয়ে যাও’ তাতেই সেই বস্তু সৃষ্টি হয়ে যায়। আসলে মানুষের বুঝার জন্য এখানে "আল্লাহর ইচ্ছা বা বলার" কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কোন বিচারক আদেশ প্রদান করলে যেমন তা কার্যকর হয়, এটা তেমনি একটি আদেশের মত ব্যাপার হিসেবে আমরা ধরতে পারি ৷
এটা আরও স্পষ্ট হবে ঈসা আঃ এর ব্যাপারে ব্যাবহৃত শব্দ দিয়ে ৷
কোরআনে ঈসা আঃ এর জন্মের ব্যাপারে 3 বার "কূন বা হও" শব্দটি এসেছে!
যেমন, কু’রআনে একটি আয়াতে আছে—
إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ
ঈসার উদাহরণ হলো আদমের মত, যাকে তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন ৷ তারপর তিনি তাকে বলেছিলেন, ‘হও’, আর তিনি হয়ে যান। [আল-ইমরান ৩:৫৯]
এই আয়াত হতে আমরা তিনটি ব্যাপার লক্ষ্য করছি ৷
(1) আদম আঃ এর যেমন কোন বাবা নেই, তেমনি ঈসাঃ এর ও কোন বাবা নেই ৷ আল্লাহ অসীম কুদরতে তাদের সৃষ্টি ও জন্ম হয়েছে ৷
(2) ঈসা আঃ এর ব্যাপারে কূন বা হও বলার পরই তাঁর জন্ম হয়ে যায়নি ৷ আমরা জানি, তার মা তাকে গর্ভে ধারন করেছেন, দীর্ঘ প্রসব বেদনার মধ্য দিয়ে জন্ম দিয়েছেন। সেটা এতটাই ভয়ঙ্কর কষ্টের ছিল যে, তার মা যে তাকে জন্ম দেওয়ার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে, আল্লাহর কাছে মরে যেতে চেয়েছিলেন, সেটা কু’রআনেই লিপিবদ্ধ করা আছে।
সুতরাং, আমরা দেখতে পাই, আল্লাহর ‘হও’ বলা মানে এই নয় যে, আমাদের সৃষ্টিজগতেও সেটা এক মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যায়। বরং সৃষ্টি প্রক্রিয়া আল্লাহর নির্ধারিত মহাবিশ্ব পরিচালনার নিয়মের মধ্যে দিয়েই হয়, যদি না আল্লাহ অন্য কিছু ইচ্ছা না করেন।তবে তাতে বাধা প্রদানের ক্ষমতা কারোর নেই ৷ আল্লাহ " হও " বললে অবশ্যই তা হবে ৷ সেটা যত অকল্পনীয়,অবাস্ত ব বা কঠিনই হউক না কেন ৷
(3) আদমের আঃ সৃষ্টির ব্যাপারে আয়াতে আমরা দেখি যে আল্লাহ প্রথম আদমকে আঃ সৃষ্টি করলেন এবং বললেন " কূন বা হও " ৷ সৃষ্টির পূর্বেই " কূন " বলেন নাই ৷ বরং সৃষ্টির পর আদমকে আঃ চলার ক্ষমতা বা প্রান দানের ক্ষেত্রে " কূন বা হও " শব্দটি ব্যাবহার করেছেন ৷এবং আদম আঃ জীবিত হয়ে গেলেন ৷ তাঁর মধ্যে প্রাণ চলে আসল ৷
এথেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারি
(A) আল্লাহ যখন কোন প্রাণহীন বস্তুকে প্রাণ দিতে চান বা প্রাণীকে প্রাণহীন করতে চান, তবে হও বললেই তা সাথে সাথে কার্যকর হয়ে যায় ৷আল্লাহ চাইলেই জড় পদার্থকে জীবে পরিনত করতে সক্ষম ৷
(B) যখন কোন নতুন কিছু সৃষ্টি করতে চান তখন " হও " বলেন এবং সাথে সাথেই তার সৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় এবং ততক্ষন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলে যতক্ষন না সমাপ্ত হয় ৷ কেউই তা বাধা দিতে সক্ষম হয় না বা ব্যার্থ করতে পারে না ৷
( যেমন ঈসা আঃ এর জন্ম)
অতএব 6 দিনে হল না 600 দিনে কাজটি সম্পন্ন হল সেটা বিবেচ্য বিষয় হবার কোন সুযোগ নেই ৷ বরং " কূন " বলার পর কেউ তা থামাতে সক্ষম হয় নাই এবং সেটাই মূখ্য বিষয় ৷
পরিশেষে বলতে চাই ,হে নাস্তিক, পুরো কোরআন না পড়ে মাত্র একটি শব্দ বা আয়াত দেখে ব্যাখ্যা প্রদান না করে ভালভাবে জানুন, বুঝুন এবং বক্তব্য পেশ করুন ৷ নিজে বিভ্রান্তির হাত হতে বাঁচুন এবং অন্যকে বাঁচান ৷
উত্তর দিয়েছেন
চয়ন চৌধুরী
কু’রআনে আল্লাহ বলেছেন
117] بَديعُ السَّمٰوٰتِ وَالأَرضِ ۖ وَإِذا قَضىٰ أَمرًا فَإِنَّما يَقولُ لَهُ كُن فَيَكونُ
[117] তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবক। যখন তিনি কোন কার্য সম্পাদনের সিন্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে একথাই বলেন, ‘হয়ে যাও’ তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়।
[আল-বাক্বারাহ ১১৭]
এই আয়াত পড়ে নাস্তিকদের লাফালাফি যেন বানরকে হার মানায় ৷ তাদের কথা হল, যদি "হও" বললেই হয়ে যায় তবে বিশ্বজগত বানাতে 6 দিন লাগল কেন?
এই আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে নাস্তিকরা কোরআনকে ভুল প্রমাণ করতে চায় ৷
এই আয়াত পড়ে অনেকে ভাবেন, কিছু সৃষ্টি করার আগে আল্লাহ হয়তো আরবিতে উচ্চারণ করেন, ‘কুন’, কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। এখানে ‘কুন’ বলাটা একটি প্রতীক মাত্র।
আবার অনেকে মনে করেন যে, তিনি কোনো কিছুকে ‘হও’ বললেই সেটা আমাদের দৃষ্টিতেও সাথে সাথে ঘটে যায়। ব্যাপারটা তা নয়। কোনো কিছুকে ‘হও’ বলাটা আমাদের জানা বাস্তবতার বাইরে ঘটে। সেটি কোনো স্থান-কালের মধ্যে ঘটে না। কিন্তু তাঁর আদেশের বাস্তবায়ন যখন আমাদের পরিচিত স্থান-কালের মধ্যে ঘটে, তখন সেটা স্থান-কালের গণ্ডির মধ্যেই ঘটে।
আমরা জানি যে সমগ্র কোরআনে "কূন বা হও " শব্দটি আটবার এসেছে ৷ যদি আমরা পর্যালোচনা করি তবে এই শব্দের কার্যক্রম কিভাবে হয় তা ভাল ভাবে উপলব্ধি করতে পারব ৷
সূরা নাহলের ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَنْ نَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ (40)
“আমি যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করি; তখন তাকে কেবল এতটুকুই বলি যে, হয়ে যাও। সুতরাং তা হয়ে যায়।" (১৬:৪০)
এই আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি শুধু বলেন ‘হয়ে যাও’ তাতেই সেই বস্তু সৃষ্টি হয়ে যায়। আসলে মানুষের বুঝার জন্য এখানে "আল্লাহর ইচ্ছা বা বলার" কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কোন বিচারক আদেশ প্রদান করলে যেমন তা কার্যকর হয়, এটা তেমনি একটি আদেশের মত ব্যাপার হিসেবে আমরা ধরতে পারি ৷
এটা আরও স্পষ্ট হবে ঈসা আঃ এর ব্যাপারে ব্যাবহৃত শব্দ দিয়ে ৷
কোরআনে ঈসা আঃ এর জন্মের ব্যাপারে 3 বার "কূন বা হও" শব্দটি এসেছে!
যেমন, কু’রআনে একটি আয়াতে আছে—
إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ
ঈসার উদাহরণ হলো আদমের মত, যাকে তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন ৷ তারপর তিনি তাকে বলেছিলেন, ‘হও’, আর তিনি হয়ে যান। [আল-ইমরান ৩:৫৯]
এই আয়াত হতে আমরা তিনটি ব্যাপার লক্ষ্য করছি ৷
(1) আদম আঃ এর যেমন কোন বাবা নেই, তেমনি ঈসাঃ এর ও কোন বাবা নেই ৷ আল্লাহ অসীম কুদরতে তাদের সৃষ্টি ও জন্ম হয়েছে ৷
(2) ঈসা আঃ এর ব্যাপারে কূন বা হও বলার পরই তাঁর জন্ম হয়ে যায়নি ৷ আমরা জানি, তার মা তাকে গর্ভে ধারন করেছেন, দীর্ঘ প্রসব বেদনার মধ্য দিয়ে জন্ম দিয়েছেন। সেটা এতটাই ভয়ঙ্কর কষ্টের ছিল যে, তার মা যে তাকে জন্ম দেওয়ার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে, আল্লাহর কাছে মরে যেতে চেয়েছিলেন, সেটা কু’রআনেই লিপিবদ্ধ করা আছে।
সুতরাং, আমরা দেখতে পাই, আল্লাহর ‘হও’ বলা মানে এই নয় যে, আমাদের সৃষ্টিজগতেও সেটা এক মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যায়। বরং সৃষ্টি প্রক্রিয়া আল্লাহর নির্ধারিত মহাবিশ্ব পরিচালনার নিয়মের মধ্যে দিয়েই হয়, যদি না আল্লাহ অন্য কিছু ইচ্ছা না করেন।তবে তাতে বাধা প্রদানের ক্ষমতা কারোর নেই ৷ আল্লাহ " হও " বললে অবশ্যই তা হবে ৷ সেটা যত অকল্পনীয়,অবাস্ত
(3) আদমের আঃ সৃষ্টির ব্যাপারে আয়াতে আমরা দেখি যে আল্লাহ প্রথম আদমকে আঃ সৃষ্টি করলেন এবং বললেন " কূন বা হও " ৷ সৃষ্টির পূর্বেই " কূন " বলেন নাই ৷ বরং সৃষ্টির পর আদমকে আঃ চলার ক্ষমতা বা প্রান দানের ক্ষেত্রে " কূন বা হও " শব্দটি ব্যাবহার করেছেন ৷এবং আদম আঃ জীবিত হয়ে গেলেন ৷ তাঁর মধ্যে প্রাণ চলে আসল ৷
এথেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারি
(A) আল্লাহ যখন কোন প্রাণহীন বস্তুকে প্রাণ দিতে চান বা প্রাণীকে প্রাণহীন করতে চান, তবে হও বললেই তা সাথে সাথে কার্যকর হয়ে যায় ৷আল্লাহ চাইলেই জড় পদার্থকে জীবে পরিনত করতে সক্ষম ৷
(B) যখন কোন নতুন কিছু সৃষ্টি করতে চান তখন " হও " বলেন এবং সাথে সাথেই তার সৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় এবং ততক্ষন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলে যতক্ষন না সমাপ্ত হয় ৷ কেউই তা বাধা দিতে সক্ষম হয় না বা ব্যার্থ করতে পারে না ৷
( যেমন ঈসা আঃ এর জন্ম)
অতএব 6 দিনে হল না 600 দিনে কাজটি সম্পন্ন হল সেটা বিবেচ্য বিষয় হবার কোন সুযোগ নেই ৷ বরং " কূন " বলার পর কেউ তা থামাতে সক্ষম হয় নাই এবং সেটাই মূখ্য বিষয় ৷
পরিশেষে বলতে চাই ,হে নাস্তিক, পুরো কোরআন না পড়ে মাত্র একটি শব্দ বা আয়াত দেখে ব্যাখ্যা প্রদান না করে ভালভাবে জানুন, বুঝুন এবং বক্তব্য পেশ করুন ৷ নিজে বিভ্রান্তির হাত হতে বাঁচুন এবং অন্যকে বাঁচান ৷
উত্তর দিয়েছেন
চয়ন চৌধুরী
16:00
Share:
0 komentar: