কুরআনে এক জায়গায় বলে মহাবিশ্ব ছয় দিনে সৃষ্টি হয়েছে, আরেক জায়গায় বলে আট দিনে সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং কুরান পরস্পর বিরোধী কথা বলে।

Posted by Adam Simon  |  No comments

(আল-কুরআনে পরস্পরবিরোধিতার অভিযোগ ও তার জবাব)
অভিযোগ-১: আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি ছয় দিনে না আট দিনে?
১.১
কুরআনের বেশ কিছু আয়াতে(৭:৫৪, ১০:৩, ১১:৭, ২৫:৫৯, ৩২:৪, ৫০:৩৮, ৫৭:৪) বলা হয়েছে আল্লাহ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে।
১.২
কিন্তু ৪১:৯-১২ নং আয়াত অনুসারে দেখা যায় আল্লাহ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন আট
দিনে।
অভিযোগের জবাব:
[আনুষঙ্গিক পাঠ:
১টা গর্ত খুঁড়তে একজন শ্রমিকের ১ ঘন্টা লাগলে, ৩টা গর্ত খুঁড়তে ৩ জন শ্রমিকের কয় ঘন্টা লাগবে? গণিতে যারা কাঁচা, তারা বলবে ৩ ঘন্টা। যারা গণিত মোটামুটি বুঝে তারা হয়ত বলবে ১ ঘন্টা। যারা আরেকটু বেশি বুঝে তারা বলবে প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রশ্নটার উত্তর দেওয়া সম্ভব না। কারণ এখানে বিভিন্ন রকমের কেস হতে পারে।
কেস ১:
৩ জন শ্রমিক একসাথে কাজ শুরু করল সেক্ষেত্রে সময় লাগবে ১ ঘন্টা ।
১।।১।।১ = ১
কেস ২:
২ জন শ্রমিক একসাথে কাজ শুরু করল। তাদের কাজ শেষ হল। অত:পর ৩য় শ্রমিক কাজ শুরু করল। এক্ষেত্রে সময় লাগবে ২ ঘন্টা।
(১।।১)+১=১+১=২
কেস ৩:
১ম শ্রমিক কাজ শেষ করল। অত:পর ২য় শ্রমিক কাজ শুরু করল।
২য় শ্রমিক কাজ শেষ করল। অত:পর ৩য় শ্রমিক কাজ শুরু করল।
এক্ষেত্রে সময় লাগবে ৩ ঘন্টা।
১+১+১=৩
এ ধরণের কেস হতে পারে অগণিত। কাজেই এ প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে জানতে হবে কে কখন কাজ শুরু করল। তথ্য পাবার সাথেই ১+১+১=৩ হিসাব করা যাবে না।]
১.১ এর আয়াতসমূহ: (প্রাসঙ্গিক অংশ)
৭:৫৪ তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল কে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন
১০:৩ নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যিনি তৈরী করেছেন আসমান ও যমীন কে ছয় দিনে
১১:৭ তিনিই আসমান ও যমীন ছয় দিনে তৈরী করেছেন
২৫:৫৯ তিনি নভোমন্ডল , ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃস্টি করেছেন
৩২:৪ আল্লাহ যিনি নভোমন্ডল , ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন
৫০:৩৮ আমি নভোমন্ডল , ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি
৫৭:৪ তিনি নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে
বিশ্লেষণ:
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করা হয়েছে মোট ছয় দিনে।
আবার, নভোমন্ডল , ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে ছয় দিনে।
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে,
এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুকে সৃষ্টি করতে কোন আলাদা সময় নেওয়া হয় নাই।
নভোমণ্ডল/আকাশ এবং ভূমণ্ডল/পৃথিবী
সৃষ্টির সাথে সাথে সমান্তরালভাবে
এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুকে সৃষ্টি করা হয়।
অর্থাৎ ৬ দিনের মধ্যে পৃথিবী এবং আকাশ সৃষ্টিকালে সমান্তরালভাবে অন্যান্য কাজও হয়েছে।
১.২ এর আয়াতসমূহ:
৪১:৯
বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু�দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা।
৪১:১০
(ﻭَﺟَﻌَﻞَ ) তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে।
৪১:১১
( ﺛُﻢَّ ﺍﺳْﺘَﻮَﻯ )অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।
৪১:১২
(ﻓَﻘَﻀَﺎﻫُﻦَّ )অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু�দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।
লক্ষ্যণীয়:
১১ এবং ১২ নম্বর আয়াতের শুরুতে 'অতঃপর'
শব্দ আছে (আরবীতে 'সুম্মা' বা 'ফা' )।
কিন্তু ১০ নম্বর আয়াতের শুরুতে কোন 'এর পর'
/'আরো'/'অত:পর'/'তারপর' এ জাতীয় কোন শব্দ(আরবীতে 'সুম্মা' বা 'ফা' ) নেই।
বিশ্লেষণ:
৯ নম্বর আয়াতের কাজ তথা পৃথিবী সৃষ্টির জন্য লেগেছে ২ দিন।
১০ নম্বর আয়াতের অন্যান্য কাজের জন্য সময় লেগেছে ৪ দিন। কিন্তু ১০ নম্বর আয়াতের শুরুতে যেহেতু 'এর পর' /'আরো'/'অত:পর'/'তারপর' এ জাতীয় কোন শব্দ(আরবীতে 'সুম্মা' বা 'ফা' ) নেই, কাজেই এই কাজ যে পৃথিবীর সৃষ্টি শেষ হবার পর শুরু হয়েছে এমন কোন তথ্য এখানে নেই, বরং এই কাজ কখন শুরু হয়েছে তা এখানে বলা নেই।
১১ নং আয়াতের নির্দেশ দেওয়া হয় ১০ নং আয়াতের অন্যান্য কাজের পর (আয়াতের শুরু হয়েছে ‘অত:পর’ দিয়ে), এখানে কোন কাজ নাই, কোন সময়ের প্রয়োজনও হয় নাই, উল্লেখও নেই।
১২ নম্বর আয়াতের কাজ তথা আকাশ সৃষ্টির জন্য লেগেছে ২ দিন। এই কাজ শুরু হয়েছে ১১ নং আয়াতের নির্দেশের পর (আয়াতের শুরু হয়েছে ‘অত:পর’ দিয়ে) তথা ১০ নম্বর আয়াতের অন্যান্য কাজ (যথা খাদ্যের ব্যবস্থা) শেষ হবার পরপরই।
এক নজরে আয়াত ৪টি হতে প্রাপ্ত তথ্য:
পৃথিবী সৃষ্টিতে ব্যয়িত সময়= ২দিন
অন্যান্য কাজে (যথা খাদ্যের ব্যবস্থা) ব্যয়িত সময়= ৪ দিন
আকাশ সৃষ্টিতে ব্যয়িত সময়= ২ দিন
আকাশ সৃষ্টি শুরু হয় অন্যান্য কাজের পরে এটা বলা থাকলেও অন্যান্য কাজ যে পৃথিবী সৃষ্টি শেষ হবার পর শুরু হয়েছে এমন কোন তথ্য এখানে নেই।
কাজেই এই আয়াতগুলো থেকে যারা হিসাব করেন যে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতে (২+৪+২) বা ৮ দিন লেগেছে, তারা আনুষঙ্গিক পাঠের গণিতে কাঁচাদের মতোই হিসেব করেন। সমান্তরালভাবে যে একাধিক কাজ হতে পারে এটা যেন তাদের ধারণাতেই আসে নাই।
প্রথমে যেহেতু পৃথিবী সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে কাজেই পৃথিবী সৃষ্টিতে লেগেছে প্রথম ২ দিন।
শেষে যেহেতু আকাশ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে কাজেই আকাশ সৃষ্টিতে লেগেছে শেষের ২ দিন।
আর ১০ নং আয়াতের অন্যান্য কাজ (যথা খাদ্যের ব্যবস্থা) সম্পাদিত হয়েছে আকাশ সৃষ্টির আগের ৪ দিনে।
ফলাফল:
১.১ এর আয়াতগুলো হতে আমরা জেনেছি:
মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে মোট সময় লেগেছ ৬ দিন এবং একাধিক কাজ সমান্তরালেও ঘটেছে। এখন ১.২ এর আয়তগুলোতে প্রাপ্ত কাজগুলোকে এই ৬ দিনের ফ্রেমের সাজানো যায় কিনা দেখি-
দিন-১ দিন-২ দিন-৩ দিন-৪ দিন-৫ দিন-৬
৯ নং আয়াত
পৃথিবী সৃষ্টি
(প্রথম ২দিনে)
১০ নং আয়াত
অন্যান্য কাজ (যথা খাদ্যের ব্যবস্থা)
(শেষের ২দিনের আগের ৪ দিনে)
১২ নং আয়াত
আকাশ সৃষ্টি
(শেষের ২ দিনে)
কাজেই আমরা বলতে পারি, পৃথিবী সৃষ্টির সাথে অন্যান্য কাজ ও সমান্তরালে সম্পাদিত হতে থাকে। ২য় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি শেষ হয়, ৪র্থ দিনে অন্যান্য কাজ (খাদ্যের ব্যবস্থা) শেষ হয়, শেষের ২ দিনে আকাশ সৃষ্টি শেষ হয়। এভাবে পৃথিবী সৃষ্টির শুরু হতে আকাশ সৃষ্টির শেষ পর্যন্ত মোট ৬ দিনই লাগে।
(২||৪)+২=৪+২=৬
সুতরাং, এখানে পরস্পরবিরোধিতার অভিযোগ একেবারেই অযৌক্তিক।
নিচের ফটো টি লক্ষ করলে আশা করি আরও ক্লিয়ার ভাবে বুজতে পারবেন।
Answered By Sakhawat Hossein

09:29 Share:
About Naveed Iqbal

Nulla sagittis convallis arcu. Sed sed nunc. Curabitur consequat. Quisque metus enim venenatis fermentum mollis. Duis vulputate elit in elit. Follow him on Google+.

0 komentar:

Get updates in your email box
Complete the form below, and we'll send you the best coupons.

Deliver via FeedBurner

Labels

Contact Form

Name

Email *

Message *

Text Widget

Recent News

About Us

Your Ads Here
back to top