মুহাম্মাদ (সাঃ) তার পুত্রের বউকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে!!! নাস্তিকদের অপপ্রচারের জবাব

Posted by Adam Simon  |  No comments

উত্তর দিয়েছেন 

ভাই  তুহিন আহমেদ  (Tuhin Ahmed)

  মুহম্মদ  কেন যয়নাব(রাঃ) কে বিয়ে করেছিলেন? এর কারণটা জানতে হলে আমাদের ইতিহাসটা একটু নিরেপেক্ষভাবে জানার চেষ্টা করতে হবে। প্রথমে দেখি, যায়েদ(রাঃ) ও যয়নাব(রাঃ) এর বিয়ে পূর্ব ও পরবর্তী প্রেক্ষাপট কেমন ছিল। জনপ্রিয় ও অন্যতম বিশুদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ তাফসীর ইবনে কাসির আমাদের বলছে,
.
“রাসূল ﷺ যখন যায়েদ বিন হারেসার পয়গাম নিয়ে যয়নাব বিনতে জাহশ(রাঃ) এর কাছে হাজির হন। তিনি(যয়নব) উত্তর দিলেন, “আমি তাকে বিয়ে করবো না।”[১]
.
যয়নাব(রাঃ) সরাসরি প্রত্যাখ্যান অনেকের কাছে বেশ রুঢ় মনে হতে পারে, কারণ এখানে প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন স্বয়ং রাসূল ﷺ। কেন তিনি সরাসরি না করেছিলেন? এর উত্তর দিয়েছেন মাওলানা ইদরীস কান্ধলবী(রহঃ) তার ‘সীরাতে মোস্তফা’ গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন,
.
“ যায়েদ বিন হারেছা(রাঃ) ছিলেন রাসূল ﷺ এর আযাদকৃত ক্রীতদাস। অপরদিকে হযরত যয়নাব(রাঃ) ছিলেন অত্যন্ত খানদান পরিবারের সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত মহিলা। সেই সাথে তিনি ছিলেন রাসূল ﷺ এর ফুফাতো বোন। আর দেশের সামাজিক প্রচলন হিসেবে তারা আযাদকৃত ক্রীতদাসের সাথে আত্নীয়তা গড়াকে খুবই আপত্তিকর,মানহানিকর ও অশোভনীয় বলে বিবেচনা করতেন। আর তাই রাসূল ﷺ যখন তার আযাদকৃত গোলাম যায়েদের জন্য বিবাহের প্রস্তাব দিলেন তখন যয়নাব ও তার ভাই তা সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন।[২]
.
এ পর্যায়ে আল্লাহর নির্দেশ এলোঃ
.
“আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” [৩]
.
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসির বর্ণনা করেন, “ এটা(আয়াতটা) শুনে হযরত যায়নাব(রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল ﷺ ! আপনি কি এ বিয়েতে সম্মত আছেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। তখন হযরত যয়নাব(রাঃ) বললেন, ‘তাহলে আমারও কোন আপত্তি নেই। আমি আল্লাহর রাসূল ﷺ এর বিরোধিতা করবো না, আমি তাকে আমার স্বামী হিসেবে বরণ করে নিলাম।’[১]
.
যারা আলোচনার দীর্ঘসূত্রিতায় বিরক্ত হচ্ছেন, তাদেরকে বলব ধৈর্য ধরে আরেকটু পড়ে যেতে। কারণ,এতোক্ষণ যা আলোচনা করেছি তা অনেক সন্দেহ নিরসন করবে। সূরা আল আহযাবের ৩৮ নং আয়াত এখানে ভেঙ্গে ভেঙ্গে উল্লেখ করছিঃ
.
i) আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন; আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন: এ আয়াতে যায়েদ বিন হারেছার(রাঃ) কথা বলা হয়েছে। তার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ছিল। তাকে আল্লাহ ইসলাম ও নবী ﷺ কে খুব কাছ থেকে অনুসরণের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যায়েদ(রাঃ) যখন খাদিজা(রাঃ) এর ক্রীতদাস ছিলেন, তখন তার চাল-চলন রাসূল ﷺ কে মুগ্ধ করে এবং তিনি তাকে মুক্ত করে দেন। তিনি ছিলেন রাসূল ﷺ এর পালকপুত্র আর সবাই তাকে যায়েদ বিন মুহম্মদ” ডাকত। এটা ছিল যায়েদ(রাঃ) এর প্রতি রাসূল ﷺ এর বিশেষ অনুগ্রহ।
.
কিন্তু আল্লাহতায়ালা পালক পুত্রের বিধান রহিত করে দিলেন এবং পিতৃ-পরিচয় জানার পরেও কাউকে ভিন্ন নামে ডাকতে নিষেধ করে দিলেনঃ
“আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। তোমাদের স্ত্রীগণ যাদের সাথে তোমরা যিহার কর, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন।” [৪]
.
আল্লাহ খুব সুন্দরভাবে আমাদের উপমা দিয়ে বোঝাচ্ছেন; যেভাবে মানুষের মধ্যে দুইটা মন থাকতে পারে না, ঠিক একইভাবে কেউ পুত্র না হয়েই পুত্রের পরিচয় বহন করতে পারে না, এটা আমাদের মুখের কথা মাত্র এবং আমাদের মনের সাথে তার কোন সংযোগ নেই।
.
তেমনিভাবে,যদি নিজেদের স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করি(যিহার), তবে তারা আমাদের মা হয়ে যায় না, স্ত্রীই থাকে। তাই পরবর্তীতে রাসূল(সাঃ) আর যায়েদ(রাঃ) কে নিজের পুত্র হিসেবে সম্বোধন করেননি, বরং বলেছিলেন, “তুমি আমার ভাই এবং বন্ধু।” [৫]
.
ii) তাকে যখন আপনি বলেছিলেন, তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর: এ আয়াতটি আলোচনায় চলুন আবার ‘সীরাতে মোস্তফা’ গ্রন্থটিতে ফিরে যাওয়া যাকঃ “আল্লাহর হুকুম মোতাবেক হযরত যায়েদ বিন হারিছা(রাঃ) এর সাথে হযরত যয়নব(রাঃ)- এর বিবাহ হয়ে গেল। বিবাহ তো হয়ে গেল, কিন্তু যায়নাবের দৃষ্টিতে যায়দ নীচ ও হীনই রইলেন। ফলে তাদের মধ্যে বনিবনা হলো না মোটেই। হযরত যায়েদ(রাঃ) বারবার রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর নিকট যায়নাব(রাঃ)-এর বেপরোয়া ভাবভংগি এবং যায়দকে উপেক্ষা করার অভিযোগ করতে লাগলেন। এ অবস্থায় তিনি বারবার যায়নাবকে তালাক দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন।” রাসূল(সাঃ) বিয়ে ভাঙ্গতে নিষেধ করেন এবং বলেন, ‘তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর।’ [৬]
.
iii) আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন, যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন অথচ আল্লাহকেই অধিক ভয় করা উচিতঃ পূর্বে ইমাম তাবারী (রহ.) থেকে যে বর্ণনা উল্লেখ করেছি,তার সাহায্যে অনেকেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ‘অন্তরে এমন বিষয় গোপন করেছিলেন’ বলতে নবী ﷺ এর যয়নাব(রাঃ) এর প্রতি হঠাৎ আসক্ত হয়ে পড়াকে বোঝানো হয়েছে। পাশ্চাত্যের অনেক লেখকই এ বর্ণনার সাথে নিজেদের কল্পনার রং ছড়িয়ে যাচ্ছে-তাই লিখেছেন তাদের বইয়ে।[৭]}
 

.
হঠাৎ আসক্ত হয়ে পড়ার বিষয়টি আসলে কিছু মানবমনের কল্পনা ছাড়া কিছুই না। কারণ,
.
প্রথমত, ইমাম তাবারী যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তা নির্ভরযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়ত, যদিও ধরে নেই সে হাদীস নির্ভরযোগ্য,তবুও রাসূল ﷺ এর হঠাৎ যয়নাবের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়াটা অবাস্তব। কারণ, যয়নাব(রাঃ) ছিলেন রাসূল ﷺ এর ফুফাতো বোন। রাসূল ﷺ তার রূপ,গুণ সম্পর্কে বহু পূর্বে অবগত ছিলেন।
.
তৃতীয়ত, যদি এটাও ধরে নেই তিনি আসলেই যয়নাবের প্রতি আসক্ত ছিলেন, তাহলে কেন তিনি যয়নাবকে যায়েদের সাথে বিয়ে দিবেন? সেরকমটা হলে তো তিনি নিজের জন্যই প্রস্তাব দিতেন।
.
তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, ‘অন্তরে যে বিষয় গোপন করেছিলেন’ বলতে তাহলে কি বুঝানো হয়েছে? মুসনাদে আবু হাতিমে রয়েছে যে, যয়নাব বিনতে জাহশ(রাঃ) যে রাসূল ﷺ এর স্ত্রী হবেন, এ কথা বহু পূর্বে আল্লাহ তাকে অবহিত করেছিলেন। কিন্তু রাসূল(সাঃ) এ কথা প্রকাশ করেননি বরং তিনি যায়েদ(রাঃ) কে স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে বলেছিলেন। তাই আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করে বোঝালেন এ কথা রাসূল(সাঃ) যতই গোপন রাখুন না কেন, আল্লাহতায়ালা তা প্রকাশ করে দিবেন।
.
iv) অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকেঃ
.
এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা একেবারে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, কেন আল্লাহতায়ালা যয়নাব(রাঃ) কে রাসূল ﷺ এর সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে পোষ্যপুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করার মাধ্যমে ‘পালকপ্রথা’ চিরতরে দূর হয়ে যায়। পরবর্তীতে যায়েদ(রাঃ) যখন যয়নাব(রাঃ) এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং তার ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যায়, তখন রাসূল(সাঃ) তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি তা গ্রহণ করেন।
.
যয়নাব(রাঃ), রাসূল ﷺ কে বলতেন, ‘আল্লাহতায়ালা আমার মধ্যে এমন তিনটি বিশেষত্ব রেখেছেন যা আপনার অন্যান্য স্ত্রীদের মাঝে নেই। প্রথম এই যে, আমার নানা ও আপনার দাদা একই ব্যক্তি। দ্বিতীয় এই যে, আপনার সাথে আমার বিয়ে আল্লাহতায়ালা আকাশে পড়িয়েছেন।আর তৃতীয় এই যে, আমাদের মাঝে সংবাদ-বাহক ছিলেন হযরত জিবরাইল(আঃ)।’
.
যয়নাব(রাঃ), রাসূল ﷺ এর অন্যান্য স্ত্রীদের সাথে বেশ গর্ব করে বলতেন, ‘তোমাদের বিয়ে দিয়েছেন তোমাদের অভিভাবক ও ওয়ারিশগণ। আর আমার বিয়ে দিয়ছেন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা সপ্তম আকাশের উপর।’[৮]
.
যারা পারষ্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ইনসেস্ট,সমকামিতার মত জঘন্য বিষয়গুলোকে বৈধতার রায় দেন, তারা এরপরেও ঠিক কিসের ভিত্তিতে এই বিয়ে নিয়ে আপত্তি তুলেন তা আমার বোধগম্য নয়। আর আমার এই লিখাটা তাদের জন্যও নয় যাদের একমাত্র রেফারেন্স হচ্ছে ইসলাম-বিদ্বেষ। এ লেখাটা তাদের জন্য যারা হৃদয় দিয়ে সত্য খুঁজে।
.
আমি বিশ্বাস করি হৃদয়টাকে খোলা রেখে সত্য খুঁজলে পরম করুনাময় তার করুণার ধারা অবশ্যই বর্ষণ করবেন।
=============================
[১] তাফসীর ইবনে কাসির-১৫ নং খন্ড, পৃষ্ঠা-৮০৫
[২] সীরাতে মোস্তফা-মাওলানা ইদরীস কান্ধলভী(রহ.),পৃষ্ঠা- ৭২৮
[৩] আল কুরআন ,সূরা আল আহযাব,আয়াতঃ৩৬
[৪] আল কুরআন, সূরা আল আহযাব, আয়াতঃ৪
[৫]তাফসীর ইবনে কাসির, ১৫ নং খন্ড, পৃষ্ঠা-৭৩৮
[৬] সীরাতে মোস্তফা-মাওলানা ইদরীস কান্ধলভী(রহ.),পৃষ্ঠা- ৭২৮
[৭] Muir,W-The life of Mohamet,Vol.3,page-231
[৮] সহীহ বুখারী

12:00 Share:
About Naveed Iqbal

Nulla sagittis convallis arcu. Sed sed nunc. Curabitur consequat. Quisque metus enim venenatis fermentum mollis. Duis vulputate elit in elit. Follow him on Google+.

0 komentar:

Get updates in your email box
Complete the form below, and we'll send you the best coupons.

Deliver via FeedBurner

Labels

Contact Form

Name

Email *

Message *

Text Widget

Recent News

About Us

Your Ads Here
back to top