কোরআনে শপথ নিয়ে নাস্তিকের অপব্যাখ্যা ও তার জবাবঃ
প্রশ্নঃ
কুরআনে কেন বার বার শপথ করা হয়েছে?
কোন কথা আস্থাযোগ্য না হলেই মানুষ শপথ করে/কসম কাটে! তবে কেন আল্লাহকে কুরানে এতোবার কসম কাটতে হলো (Quran 57:1-4, 52:1-6, 53:1, 56:75, 70:40, 74:31-34, 84:16-18, 92:1-3, 95:1-3…………… ইত্যাদি)?
.
উত্তরঃ
প্রশ্ন হতে পারে যে আল্লাহ্ শপথ করছেন কেন?
আমরা সাধারণত শপথ করি আমাদের কোনও কথার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে, আমরা যে সত্যি বলছি সেটা বোঝাতে।
আল্লাহ্র ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য নয়। কারণ তিনি নিজেই আল-হাক্ক, মিথ্যে তিনি বলবেন তা হতেই পারে না। তাহলে শপথ কেন নিলেন। কথার গুরুত্ব প্রকাশে। যখন আল্লাহ্ কুরআনে কোনও কিছুর নামে শপথ নেন তখন বুঝতে হবে যে আল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে যাচ্ছেন।
, নিজের কোন কথা বিশ্বাস করানোর জন্য আল্লাহ তা’আলার কোন কসম করার প্রয়োজন নেই। নিজের কোন কথা সম্পর্কে কসম করা হতে তিনি বেনিয়ায। কুরআন মাজীদে বিভিন্ন স্থানে যে বিভিন্ন কসম করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য কথাকে সৌন্দর্যমন্ডীত, অলংকারপূর্ণ ও বলিষ্ঠ করে তোলা।
অনেক সময় এ দিকটার প্রতি লক্ষ্য থাকে যে, যেই জিনিসটার কসম করা হচ্ছে, তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে তার পরবর্তীতে যে বক্তব্য আসছে তা তার সত্যতার প্রমান বহন করে।
কুরআনে উল্লেখিত আল্লাহর এই শপথগুলো দ্বারা শপথকৃত বস্তুকে শ্রদ্ধা বা সম্মান জানানো হয়না বরং কোনো দাবির স্বপক্ষে প্রমান উপস্থাপন করা হয়ে থাকে।
.
“ মুফাসসিরগন বলেন, শপথ হচ্ছে আরবী ভাষালঙ্কারের একটি বিশেষ শৈলী। এর দ্বারা কথা শক্তিশালী হয়, কথায় আসর হয়”
[তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ৩/১৫৮]
ব্যাখ্যাঃ-
মুফাসসিরেকেরামে র বক্তব্য হচ্ছে-
. প্রথমতঃ
মানুষ যদি কসম/শপথ করাকে খারাপ বানিয়ে ফেলে, তার মানে এই না যে আল্লাহর জন্য ও সেটা করা খারাপ।কারন বান্দার কসম আর মালিকের কসম কখনো এক হতেপারেনা।
দ্বিতীয়তঃ
যেগুলোকে কসম বলা হচ্ছে মূলত সেগুলো কসম নয় কারণ আল্লাহর কোন কিছুর কসম করার প্রয়োজন নেই। আরবি ওয়াও দিয়ে শুরু করা বাক্যের বহু ধরণের অনুবাদ হয় যেমন – ‘এবং’, ‘তারপর’, ‘কসম’, ‘মনে পড়ে’ ইত্যাদি। বিভিন্ন পরিপেক্ষিতে বিভিন্ন অনুবাদক ওয়াও দিয়ে শুরু করা বাক্যগুলোকে বিভিন্ন ভাবে অনুবাদ করেছেন। কেউ ‘এবং’ বলেছেন, কেউ ‘তারপর’ বলেছেন, কেউ ‘কসম’ বলেছেন ইত্যাদি। আপনি আব্দেল হালিমের অনুবাদ পড়ুন। তার অনুবাদটি এখন পর্যন্ত ভাষা গত দিক থেকে সবচেয়ে সঠিক অনুবাদ। বাকি সকল অনুবাদে বিপুল পরিমাণের ভাষা গত ভুল রয়েছে।
তৃতীয়তঃ
আল্লাহর এবং মানুষের মধ্যে কসম করার মধ্যে পার্থক্য আছে। মানুষ কসম করুক আর না করুক কিছুই যায় আসে না, তার মানে না যে আল্লাহ কসম ভাঙলে কিছুই যায় আসে না। সুতরাং, মানুষের কসম করার সাথে আল্লাহর কসম করার তুলনা করাটা হাস্যকর।
চতুর্থতঃ
আল্লাহ কসম করেন যখন কোন কিছুর প্রতি তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান। যেমন “ওয়াল আসর” – সময়ের কসম। এখানে পুরো সুরাটাই হচ্ছে সময়ের গুরুত্ব নিয়ে। তাই আল্লাহ সময়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। যদিও এটা কসম নয়। বরং সময়ের প্রতি আল্লাহ আমাদের বিশেষ নজর দিতে বলেছেন। কসম ভুল অনুবাদ।
আবারো, আরবির প্রতি নাস্তিকদের অজ্ঞতা প্রকাশ পায়। কু’রআনের ভাষা না ভুঝে সে ভাষায় প্রকাশ করা একটি বই নিয়ে তর্ক করা, আর ইংরেজি না জেনে বিখ্যাত ইংলিশ কবি শেলীর কবিতার মধ্যে ভুল বের করাটা একই ঘটনা।
একটু গভীর বিশ্লেষণের চেষ্টা করছিঃ
::::::::::::::: ::::::::::::::: ::::::::::::::: ::::::::::::::
আল্লাহ্ কখনো বক্তব্যের গুরুত্ব বুঝাতে,কখনো বক্তব্যের প্রতি বিশেষ মনযোগ আকর্ষণ করতে, কখনো বিষয়ের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বুঝাতে,আবার কখনোবা গভীর রহস্যের দোয়াড় উন্মোচনের জন্যও শপথ করেছেন--
যেমন--
১)
﴿ وَالصُّبۡحِ اِذَا تَنَفَّسَۙ﴾
"শপথ সকালের যখন তারা দিনের আলোয় নি:শ্বাস নেয়"। (সূরা তাকভীর:১৮)।
ফটোসিনথেসিস আবিষ্কার করার পূর্বে, এই আয়াতটি বেশ রহস্য তৈরী করে রেখেছিল।
মানুষ ভাবতো এটা এমন কি হতে পারে যা দিনের আলোয় নি:শ্বাস নেয়! লোকজন খুব অবাক হয়ে ভাবতো এমন কিছুর কথা, কিন্তু তারা খুজে পায়নি এটা। যতদিন না ফটোসিনথেসিস পদ্ধতির কথা মানুষ জানলো। এই পদ্ধতি মানুষকে জানালো এমন এক প্রক্রিয়ার কথা যেটা ব্যবহার করে গাছ কার্বণ-ডাই-অক্স াইড
কে শোষণ করার মাধ্যমে নিজের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে। একইসাথে অক্সিজেনকে
পরিবেশ এ মুক্ত করে। এই প্রক্রিয়াটি কেবল দিনের বেলাতেই ঘটে, যেহেতু আলো
এখানে অনঘটক হিসেবে কাজ করে।
অর্থাৎ গাছ কেবল দিনের বেলাতেই নি:শ্বাস ক্রিয়া চালায়। আর এ কথাটিই বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। এখানে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি গাছের উল্যেখ করে আয়াতটি নাজিল করেন নি। বোধহয় এ কারনে যে, ভবিষ্যতেও কোরআন যে কালোত্তির্ন, এই বিষয়টি যাতে পরিষ্কার হয়।
২)
সূরা আসরে আল্লাহ্ সময়ের শপথ করেছেন!!
ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যদি কুরআনে অন্য কোনো সূরা নাযিল না করে শুধু সূরা আল আসর নাযিল করতেন তাহলে এটা মানুষের হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট হত।'(মিফতাহুস সাআদাহ : ইমাম শাফেয়ি)
যদি কেউ এ সূরায় গভীরভাবে দৃষ্টি দেয় তাহলে সে তাতে একটি উন্নত, সুন্দর, শান্তিময়, পরিপূর্ণ এবং সবার জন্য কল্যাণকর সমাজের চিত্র দেখতে পাবে। (আদওয়াউল বায়ান : ৯/৫০৭)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ সূরাটি শুরু করেছেন ‘ওয়াল আসর’ শব্দ দিয়ে। ইরশাদ হয়েছে-
وَالْعَصْرِ ﴿1﴾
‘আসরের শপথ।(’সূরা আসর-১)
‘আসর’ বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
‘আসর’ শব্দের অর্থ : যুগ বা সময়।
কোনো বস্তু বা বিষয়ের শপথ করলে তার অস্বাভাবিক গুরুত্ব বুঝায়।
সময় এমনই এক বিস্ময়ের আধার যে, আমরা জানি না অতীতকালে এটা কি কারণে হয়েছে। আমরা জানি না ভবিষ্যতে কি ঘটতে যাচ্ছে। এমনকি আমাদের নিজেদের জীবন, নিজের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সম্পর্কে আমরা বলতে পারি না যে আগামী কালকের পরিবশেটা ঠিক আজকের মত থাকবে কি থাকবে না। দেখা যায় মানুষ নিজ সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। আগামীকাল এটা সে বাস্তবায়ন করবে। অর্জন করবে এটা সেটা অনেক কিছু। সে দৃঢ় প্রত্যয়ী থাকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে। সব উপকরণ থাকে হাতের নাগালে। সব মাধ্যম ও ফলাফল থাকে আপন নখদর্পনে। কোনো কিছুরই অভাব নেই। তবুও এ ‘সময়’ নামক বস্তুটির ব্যবধানে এমন কিছু ঘটে যায় যা তার সব কিছুকে তছনছ করে দেয়। সে ভাবতেই পারে না- কেন এমন হল। অনেক বড় বড় হিসাব সে মিলিয়েছে কিন্তু এর হিসাব সে মেলাতে পারছে না। এটাই হল ‘সময়’। আল্লাহ তাআলা এর প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই বলেছেন, ‘ওয়াল আসর’ – শপথ সময়ের।
এ থেকে আমরা জীবনের জন্য সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ হলেন মহান। তিনি মহান বস্তু ব্যতীত অন্য কোনো কিছুর শপথ করেন না।
সুতরাং বলা যায়,
কুরআনুল কারীমের শপথগুলো মোটেও কুরআনের ত্রুটি নয় কলেবর বড় হওয়ার আশঙ্কায় তা এখানে লেখা হলো না; এমন করে প্রতিটি আয়াত গভীর পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে পাঠ করলে লক্ষ্য করা যাবে যে যেসব সূরাতেই এমন কোনো শপথ এসেছে তাতে অবশ্যই কোনো না কোনো সম্পর্ক পরের আয়াতের সাথে রয়েছে। বলা যায় এটি কুরআনুল কারীমের লুকায়িত সৌন্দর্য রয়েছে যা এই পৃথিবীতে শূধুমাত্র কুরআনুল কারীমের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নিসন্দেহে এই শপথগুলো আল্লাহর কালাম কুরআনুল মাজিদের অনন্য বৈশিষ্ট্য বা মুযিজাহ, পাঠক যখনই এর দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করবে নিরপেক্ষ মন নিয়ে সে অবশ্যই এতে হেদায়েতের আলো দেখতে পাবে।
আল্লাহ্ সবাইকে সত্যকে বুঝার ও মানার তৌফিক দান করুন,আমিন।
উত্তর দিয়েছেন
নয়ন চৌধুরী
প্রশ্নঃ
কুরআনে কেন বার বার শপথ করা হয়েছে?
কোন কথা আস্থাযোগ্য না হলেই মানুষ শপথ করে/কসম কাটে! তবে কেন আল্লাহকে কুরানে এতোবার কসম কাটতে হলো (Quran 57:1-4, 52:1-6, 53:1, 56:75, 70:40, 74:31-34, 84:16-18, 92:1-3, 95:1-3…………… ইত্যাদি)?
.
উত্তরঃ
প্রশ্ন হতে পারে যে আল্লাহ্ শপথ করছেন কেন?
আমরা সাধারণত শপথ করি আমাদের কোনও কথার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে, আমরা যে সত্যি বলছি সেটা বোঝাতে।
আল্লাহ্র ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য নয়। কারণ তিনি নিজেই আল-হাক্ক, মিথ্যে তিনি বলবেন তা হতেই পারে না। তাহলে শপথ কেন নিলেন। কথার গুরুত্ব প্রকাশে। যখন আল্লাহ্ কুরআনে কোনও কিছুর নামে শপথ নেন তখন বুঝতে হবে যে আল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে যাচ্ছেন।
, নিজের কোন কথা বিশ্বাস করানোর জন্য আল্লাহ তা’আলার কোন কসম করার প্রয়োজন নেই। নিজের কোন কথা সম্পর্কে কসম করা হতে তিনি বেনিয়ায। কুরআন মাজীদে বিভিন্ন স্থানে যে বিভিন্ন কসম করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য কথাকে সৌন্দর্যমন্ডীত,
অনেক সময় এ দিকটার প্রতি লক্ষ্য থাকে যে, যেই জিনিসটার কসম করা হচ্ছে, তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে তার পরবর্তীতে যে বক্তব্য আসছে তা তার সত্যতার প্রমান বহন করে।
কুরআনে উল্লেখিত আল্লাহর এই শপথগুলো দ্বারা শপথকৃত বস্তুকে শ্রদ্ধা বা সম্মান জানানো হয়না বরং কোনো দাবির স্বপক্ষে প্রমান উপস্থাপন করা হয়ে থাকে।
.
“ মুফাসসিরগন বলেন, শপথ হচ্ছে আরবী ভাষালঙ্কারের একটি বিশেষ শৈলী। এর দ্বারা কথা শক্তিশালী হয়, কথায় আসর হয়”
[তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ৩/১৫৮]
ব্যাখ্যাঃ-
মুফাসসিরেকেরামে
. প্রথমতঃ
মানুষ যদি কসম/শপথ করাকে খারাপ বানিয়ে ফেলে, তার মানে এই না যে আল্লাহর জন্য ও সেটা করা খারাপ।কারন বান্দার কসম আর মালিকের কসম কখনো এক হতেপারেনা।
দ্বিতীয়তঃ
যেগুলোকে কসম বলা হচ্ছে মূলত সেগুলো কসম নয় কারণ আল্লাহর কোন কিছুর কসম করার প্রয়োজন নেই। আরবি ওয়াও দিয়ে শুরু করা বাক্যের বহু ধরণের অনুবাদ হয় যেমন – ‘এবং’, ‘তারপর’, ‘কসম’, ‘মনে পড়ে’ ইত্যাদি। বিভিন্ন পরিপেক্ষিতে বিভিন্ন অনুবাদক ওয়াও দিয়ে শুরু করা বাক্যগুলোকে বিভিন্ন ভাবে অনুবাদ করেছেন। কেউ ‘এবং’ বলেছেন, কেউ ‘তারপর’ বলেছেন, কেউ ‘কসম’ বলেছেন ইত্যাদি। আপনি আব্দেল হালিমের অনুবাদ পড়ুন। তার অনুবাদটি এখন পর্যন্ত ভাষা গত দিক থেকে সবচেয়ে সঠিক অনুবাদ। বাকি সকল অনুবাদে বিপুল পরিমাণের ভাষা গত ভুল রয়েছে।
তৃতীয়তঃ
আল্লাহর এবং মানুষের মধ্যে কসম করার মধ্যে পার্থক্য আছে। মানুষ কসম করুক আর না করুক কিছুই যায় আসে না, তার মানে না যে আল্লাহ কসম ভাঙলে কিছুই যায় আসে না। সুতরাং, মানুষের কসম করার সাথে আল্লাহর কসম করার তুলনা করাটা হাস্যকর।
চতুর্থতঃ
আল্লাহ কসম করেন যখন কোন কিছুর প্রতি তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান। যেমন “ওয়াল আসর” – সময়ের কসম। এখানে পুরো সুরাটাই হচ্ছে সময়ের গুরুত্ব নিয়ে। তাই আল্লাহ সময়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। যদিও এটা কসম নয়। বরং সময়ের প্রতি আল্লাহ আমাদের বিশেষ নজর দিতে বলেছেন। কসম ভুল অনুবাদ।
আবারো, আরবির প্রতি নাস্তিকদের অজ্ঞতা প্রকাশ পায়। কু’রআনের ভাষা না ভুঝে সে ভাষায় প্রকাশ করা একটি বই নিয়ে তর্ক করা, আর ইংরেজি না জেনে বিখ্যাত ইংলিশ কবি শেলীর কবিতার মধ্যে ভুল বের করাটা একই ঘটনা।
একটু গভীর বিশ্লেষণের চেষ্টা করছিঃ
:::::::::::::::
আল্লাহ্ কখনো বক্তব্যের গুরুত্ব বুঝাতে,কখনো বক্তব্যের প্রতি বিশেষ মনযোগ আকর্ষণ করতে, কখনো বিষয়ের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বুঝাতে,আবার কখনোবা গভীর রহস্যের দোয়াড় উন্মোচনের জন্যও শপথ করেছেন--
যেমন--
১)
﴿ وَالصُّبۡحِ اِذَا تَنَفَّسَۙ﴾
"শপথ সকালের যখন তারা দিনের আলোয় নি:শ্বাস নেয়"। (সূরা তাকভীর:১৮)।
ফটোসিনথেসিস আবিষ্কার করার পূর্বে, এই আয়াতটি বেশ রহস্য তৈরী করে রেখেছিল।
মানুষ ভাবতো এটা এমন কি হতে পারে যা দিনের আলোয় নি:শ্বাস নেয়! লোকজন খুব অবাক হয়ে ভাবতো এমন কিছুর কথা, কিন্তু তারা খুজে পায়নি এটা। যতদিন না ফটোসিনথেসিস পদ্ধতির কথা মানুষ জানলো। এই পদ্ধতি মানুষকে জানালো এমন এক প্রক্রিয়ার কথা যেটা ব্যবহার করে গাছ কার্বণ-ডাই-অক্স
অর্থাৎ গাছ কেবল দিনের বেলাতেই নি:শ্বাস ক্রিয়া চালায়। আর এ কথাটিই বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। এখানে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি গাছের উল্যেখ করে আয়াতটি নাজিল করেন নি। বোধহয় এ কারনে যে, ভবিষ্যতেও কোরআন যে কালোত্তির্ন, এই বিষয়টি যাতে পরিষ্কার হয়।
২)
সূরা আসরে আল্লাহ্ সময়ের শপথ করেছেন!!
ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যদি কুরআনে অন্য কোনো সূরা নাযিল না করে শুধু সূরা আল আসর নাযিল করতেন তাহলে এটা মানুষের হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট হত।'(মিফতাহুস সাআদাহ : ইমাম শাফেয়ি)
যদি কেউ এ সূরায় গভীরভাবে দৃষ্টি দেয় তাহলে সে তাতে একটি উন্নত, সুন্দর, শান্তিময়, পরিপূর্ণ এবং সবার জন্য কল্যাণকর সমাজের চিত্র দেখতে পাবে। (আদওয়াউল বায়ান : ৯/৫০৭)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ সূরাটি শুরু করেছেন ‘ওয়াল আসর’ শব্দ দিয়ে। ইরশাদ হয়েছে-
وَالْعَصْرِ ﴿1﴾
‘আসরের শপথ।(’সূরা আসর-১)
‘আসর’ বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
‘আসর’ শব্দের অর্থ : যুগ বা সময়।
কোনো বস্তু বা বিষয়ের শপথ করলে তার অস্বাভাবিক গুরুত্ব বুঝায়।
সময় এমনই এক বিস্ময়ের আধার যে, আমরা জানি না অতীতকালে এটা কি কারণে হয়েছে। আমরা জানি না ভবিষ্যতে কি ঘটতে যাচ্ছে। এমনকি আমাদের নিজেদের জীবন, নিজের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সম্পর্কে আমরা বলতে পারি না যে আগামী কালকের পরিবশেটা ঠিক আজকের মত থাকবে কি থাকবে না। দেখা যায় মানুষ নিজ সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। আগামীকাল এটা সে বাস্তবায়ন করবে। অর্জন করবে এটা সেটা অনেক কিছু। সে দৃঢ় প্রত্যয়ী থাকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে। সব উপকরণ থাকে হাতের নাগালে। সব মাধ্যম ও ফলাফল থাকে আপন নখদর্পনে। কোনো কিছুরই অভাব নেই। তবুও এ ‘সময়’ নামক বস্তুটির ব্যবধানে এমন কিছু ঘটে যায় যা তার সব কিছুকে তছনছ করে দেয়। সে ভাবতেই পারে না- কেন এমন হল। অনেক বড় বড় হিসাব সে মিলিয়েছে কিন্তু এর হিসাব সে মেলাতে পারছে না। এটাই হল ‘সময়’। আল্লাহ তাআলা এর প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই বলেছেন, ‘ওয়াল আসর’ – শপথ সময়ের।
এ থেকে আমরা জীবনের জন্য সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ হলেন মহান। তিনি মহান বস্তু ব্যতীত অন্য কোনো কিছুর শপথ করেন না।
সুতরাং বলা যায়,
কুরআনুল কারীমের শপথগুলো মোটেও কুরআনের ত্রুটি নয় কলেবর বড় হওয়ার আশঙ্কায় তা এখানে লেখা হলো না; এমন করে প্রতিটি আয়াত গভীর পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে পাঠ করলে লক্ষ্য করা যাবে যে যেসব সূরাতেই এমন কোনো শপথ এসেছে তাতে অবশ্যই কোনো না কোনো সম্পর্ক পরের আয়াতের সাথে রয়েছে। বলা যায় এটি কুরআনুল কারীমের লুকায়িত সৌন্দর্য রয়েছে যা এই পৃথিবীতে শূধুমাত্র কুরআনুল কারীমের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নিসন্দেহে এই শপথগুলো আল্লাহর কালাম কুরআনুল মাজিদের অনন্য বৈশিষ্ট্য বা মুযিজাহ, পাঠক যখনই এর দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করবে নিরপেক্ষ মন নিয়ে সে অবশ্যই এতে হেদায়েতের আলো দেখতে পাবে।
আল্লাহ্ সবাইকে সত্যকে বুঝার ও মানার তৌফিক দান করুন,আমিন।
উত্তর দিয়েছেন
নয়ন চৌধুরী
12:00
Share:
0 komentar: