উত্তর দিয়েছেন
ভাই নয়ন চৌধুরী (Nayan Chowdhury)
নাস্তিক, ইসলাম বিরোধীদের প্রশ্ন ও এর জবাব!
---------------
প্রশ্নঃ
আল্লাহ্ দয়ালু হয়ে বিচার করে অনন্তকাল আগুনে পুড়াবেন কিভাবে এটা তার রাহমানুর রাহিম নামের সাথে সাংঘর্ষিক নয় কি?
উত্তরঃ
আচ্ছে, কিছুদিন আগে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির জন্য সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল! তাদের কাওকে ফাসি আর কাউকে আমৃত্যু কারাবাসের সাজা দেয়া হয়েছে। তাদের বিচার হয়েছে বিশেষ আদালতে এবং ফাঁসি দেয়ার প্রচলিত নিয়মও উপেক্ষিত হয়েছে(১২টার আগে ফাঁসি)।
এখন এই বৃদ্ধ ব্যাক্তিদের কে ফাসি বা আমৃত্যু কারাবাসের সাজা দেয়া কি অমানবিক বলবেন?
উত্তর অবশ্যই "না" বলবেন!!
কেন বলবেননা অমানবিক?
কারন তাদের অপরাধ এতটাই অমানবিক ছিল যে, যেকোন শাস্তিই তাদের জন্য কম হয়েযায়!! এই জঘন্য অপরাধীদের সাথে কোন মানবিক আচরন গ্রহনযোগ্য বলে মনেকরেননা,তাইতো
তাহলে ভেবে দেখুন,শুধুমাত্র
সামান্য দেশদ্রোহিতা যদি অমানবিক হতেপারে তাহলে মাওলার সমস্ত নেয়ামত গ্রহন করে, মাওলার রাজ্যে বসবাস করে মাওলার বিরোধীতাকারীরা,
তিনি নিজেই বলেছেন তিনি দয়ালু! তাহলে শাস্তির প্রশ্ন আসবে কেন?
---------------
নিশ্চয় তিনি আল্লাহ, অতি দয়ালু, অপরিসীম মেহেরবান...
আল্লাহ তা'আলা নিজের জন্য রহমত গুণকে পছন্দ করেছেন। তাঁর রহমত তাঁর ক্রোধের উপর প্রাধান্য লাভ করেছে। তাঁর রহমত সব কিছুকে বেষ্টন করে নিয়েছে।
তিনি সমস্ত সৃষ্টির উপর সাধারণ রহমত করেন। কিন্তু বিশেষ রহমত তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
তিনি মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু।
[সূরা: আল-আহযাব, আয়াত: ৪৩]
আল্লাহ আরো বলেন-
বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।(নিসা ৩১)
উপরূক্ত আয়াত গুলো থেকে বুঝতে পারলাম তিনি মুমিনদের প্রতি দয়ালু।
তাহলে কাফিরদের প্রতি তিনি কেমন?
আল্লাহ্ বলেন--
বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।(নিসা ৩২)
অর্থাৎ তিনি মুমিনদের ভালবাসেন কাফেরদের পছন্দ করেননা!
যাদের পছন্দ করেননা তাদের প্রতি তিনি কেমন হবেন?
---------------
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ شَاقُّوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَمَن يُشَاقِّ اللَّهَ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ( 4 ) আল-মুমতাহিনাহ
যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
তিনি কেন শাস্তি দিবেন?
---------------
আল্লাহ্ বলেন---
فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللّهُ مَرَضاً وَلَهُم عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।
আল্লাহ্ আরো বলেন--
'কিন্তু আজ সেই তোমরাই নিজেদের ভাইদেরকে হত্যা করছো, নিজেদের গোত্রীয় সম্পর্কযুক্ত কিছু লোককে বাস্তভিটা ছাড়া করছো, যুলুম ও অত্যধিক বাড়াবাড়ি সহকারে তাদের বিরুদ্ধে দল গঠন করছো এবং তারা যুদ্ধবন্দী হয়ে তোমাদের কাছে এলে তাদের মুক্তির জন্য তোমরা মুক্তিপণ আদায় করছো। অথচ তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে উচ্ছেদ করাই তোমাদের জন্য হারাম ছিল। তাহলে কি তোমরা কিতাবের একটি অংশের ওপর ঈমান আনছো এবং অন্য অংশের সাথে কুফরী করছো? তারপর তোমাদের মধ্য থেকে যারাই এমনটি করবে তাদের শাস্তি এ ছাড়া আর কি হতে পারে যে, দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছিত ও পর্যুদস্ত হবে এবং আখেরাতে তাদেরকে কঠিনতম শাস্তির দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে? তোমাদের কর্মকান্ড থেকে আল্লাহ বেখবর নন।
এই লোকেরাই আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন কিনে নিয়েছে। কাজেই তাদের শাস্তি কমানো হবে না এবং তারা কোন সাহায্যও পাবে না।'
[আল বাকারাহঃ আয়াত নং -৮৫ ও ৮৬]
অর্থাৎ মিথ্যাচার, নাফরমানি, হত্যা ও সীমালঙ্ঘনের জন্য তিনি শাস্তি দিবেন যা তারা নিজেরা উপার্জন করেছে!
প্রশ্ন হচ্ছে তারা যদি কোন সৎকর্ম করে তার প্রতিদান পাবেনা?
---------------
আল্লাহ্ বলেন-
مَنْ كَانَ يُرِيْدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيب
ٍ ‘যে ব্যক্তি আখেরাতের ফসল কামনা করে, তার জন্য আমরা তার ফসল বর্ধিত করে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমরা তাকে সেখান থেকে কিছু দেই। তবে তার জন্য আখেরাতে কিছুই থাকবে না’ (শূরা ২০)
বস্ত্ততঃ কাফিরদের সৎকর্মের পুরস্কার আল্লাহ দুনিয়াতেই দিবেন তাদের নাম-যশ বৃদ্ধি, সুখ-সমৃদ্ধি, সন্তানাদি ও রূযী বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যমে। কিন্তু আখেরাতে তারা কিছুই পাবে না!
প্রশ্ন হচ্ছে তাদের প্রতি কি অবিচার করা হবে?
---------------
আল্লাহ্ বলেন--
আর যারা অসৎকাজ নিয়ে আসবে, তাদের সবাইকে অধোমুখে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা কি যেমন কর্ম তেমন ফল--- ছাড়া অন্য কোন প্রতিদান পেতে পারো?(নামল-৯০)
আরো বলেন---
﴿مَن جَاء بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ خَيْرٌ مِّنْهَا وَمَن جَاء بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى الَّذِينَ عَمِلُوا السَّيِّئَاتِ إِلَّا مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
যে কেউ ভাল কাজ নিয়ে আসবে তার জন্য রয়েছে তার চেয়ে ভাল ফল এবং যে কেউ খারাপ কাজ নিয়ে আসে তার জানা উচিৎ যে, অসৎ কর্মশীলরা যেমন কাজ করতো ঠিক তেমনটিই প্রতিদান পাবে।(কাসাস ৮৪)
অর্থাৎ তিনি ন্যায় বিচার করবেন, ততটুকুই শাস্তি দিবেন যতটুকু পাপ করেছে! কমও না বেশিও না।
সবশেষ বলব,
দয়ালু শব্দের অর্থ যিনি দয়াবান, দয়া দেখান বা যার দয়া আছে। এই দয়া গরীব দুখীর প্রতি হতে পারে। সাধারণ মানুষের প্রতি হতে পারে। জীবের প্রতি হতে পারে। অপরাধীর প্রতি হতে পারে কি? হতে পারেইতো। কিন্তু সেটা কি রকম? একজন খুন করলো আর আপনি তাকে মাফ করে দিলেন এটা আবার কি ধরনের দয়া?এটা কখনো দয়ার ক্যাটাগরিতে পড়তে পারেনা।
মনেরাখতে হবে বিচার মানে কিন্তু শাস্তি নয়। বিচার মানে হচ্ছে একটা লোককে জবাবদিহি করা। বিচারের মাধ্যমে একটা লোকের শাস্তিও হতে পারে, ফাঁসিও হতে পারে, তিনি বেকসুর খালাসও পেতে পারেন।
ন্যায় বিচাররের আসল উদ্দেশ্য অপরাধ নির্মূল করা ও শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বিচারে নীতিহীনতা, অস্থিতিশীলতা, পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদি আচরণ গোটা মানব সমাজে অস্বস্তিকর পরিবেশ, অশান্তি, হানাহানি, খুনোখুনি ও অস্থিরতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইসলাম শাশ্বত, অবিনশ্বর-চিরন্ত
অন্যত্র এসেছে- “আর তিনিই সর্বোত্তম হুকুমদাতা ও শ্রেষ্ঠ বিচারক।” [আল কুরআন ৭ঃ৮৭]
এখন আমার প্রশ্ন ইসলাম বিরোধীদের প্রতি ----
--_-_-_-_-_-_-_
ন্যায় বিচারক কিভাবে জালিম হয় আর ন্যায় বিচার কিভাবে অমানবিক হয় একটু বুঝিয়ে দিন প্লিজ?
20:00
Share:
0 komentar: