কিবলা নিয়ে নাস্তিকদের বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারের জবাবঃ
কিবলা নিয়ে যাবতীয় বিভ্রান্তির অবসান:
কিবলা আসলে কোন দিকে হবে- এটা বের করার বেশ কিছু পদ্ধতি আছে। আমি সেদিকে
যাবো না। শুধু main concept-টা জেনে রাখুন- যে দিক দিয়ে কা’বা সবচেয়ে কাছে
সেটাই আপনার কিবলা। পৃথিবী গোলাকার বিধায় (পুরোপুরি গোল না), কোন একটা
নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে বিভিন্ন উপায়ে আপনি কা’বায় যেতে পারবেন। কিন্তু এদের
মধ্যে সর্বনিম্ন দূরত্ব যে দিকে সেটাই হবে আপনার কাঙ্খিত কিবলা। কয়েকটা
complicated উদাহরণ দেখা যাক।
কাবাকে কেন্দ্র করে
পৃথিবীর মানচিত্র এটি আর গোলাকার হবার কারণে উত্তর আমেরিকার অবস্থান কাবার
সাপেক্ষে বাস্তবে কিভাবে সেটা দেখুন। এখন কিন্তু কিবলা আর দক্ষিণ-পূর্ব
দিকে নেই। কিবলা এখন উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে হয়ে গেছে। মনে হয় যে কিবলা
দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কিন্তু বাস্তবে সেটা উলটে যায়, হয়ে যায় উত্তর পূর্ব
দিকে। ভৌগলিক দিকগুলো দেখিয়ে দেয়া হয়েছে এখানে তাই সমস্যা হবার কথা না।
আলাস্কা থেকে কাবা বরাবর সরলরেখা টানুন সেটা আপনাকে ভৌগলিক উত্তর দেখাবে
তার মানে আলাস্কার কিবলা উত্তর দিকে। আবার কানাডা আর আমেরিকার উত্তর দিকে
উত্তর-পূর্ব বরাবর হয়। এই ম্যাপ দিয়েও আসলে ১০০% পরিস্কার ধারনা পাওয়া
সম্ভব না কারন এটা তিন মাত্রার ব্যাপার আর ২ মাত্রায় তাকে দেখানো পুরোপুরি
সম্ভব না।
তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়। পৃথিবী যদি গোলাকার হয় তাহলে তো
পূর্ব দিক দিয়েও যেখানে যাওয়া যাবে, পশ্চিম দিক দিয়েও সেখানে যাওয়া যাবে।
যেমন USA থেকে পশ্চিম দিকে এশিয়া হয়ে ইউরোপ যাওয়া যাবে আবার পূর্ব দিকে
সরাসরি ইউরোপ হয়েও যাওয়া যাবে। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে আমি পূর্ব বা পশ্চিম
যেদিকেই মুখ ফিরাই না কেন কিবলার দিকেই থাকবে। কিন্তু মুখ ফেরানো থাকলেই
হবে না। USA থেকে ইউরোপ যাত্রার ক্ষেত্রে পূর্ব দিকেই যাওয়া হয় কারন সেদিকে
গেলে কম দূরত্ব যেতে হবে। কিবলার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। ঐ যে একটু আগে
বললাম যেদিকে মুখ ফেরালে কা’বা ও আপনার বর্তমান দূরত্ব থাকে সবচেয়ে কম
সেদিকেই মুখ ফেরাতে হবে।
যদি মেরুতে থাকি তাহলে কোন দিকে মুখ ফেরাতে
হবে? উত্তর মেরুতে গেলে সব দিকেই দক্ষিণ আবার দক্ষিণ মেরুতে গেলে সবদিকেই
উত্তর। এবার আরেকবার দ্বিতীয় ম্যাপটি দেখুন। সেখান থেকে কি বোঝা যায় না কোন
দিকে মুখ ফেরাতে হবে? উত্তর মেরুবিন্দুতে যখন থাকবেন তখন কোন দিকের খোঁজ
করা বোকামি। আপনাকে দেখতে হবে কোন দিক থেকে কা’বা সবচেয়ে কাছে, সেটাই আপনার
কিবলা। সব দিকে দিয়েই আপনি যেতে পারবেন কা’বায় কিন্তু দিকের সাথে
সর্বনিম্ন দূরত্বের ব্যাপারটাও বলেছি। মেরুতে সাধারন কম্পাস কাজ করবে না।
সেখানে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে Gyro compass (চুম্বকবিহীন একধরনের
কম্পাস)[১১] এবং তারার অবস্থান হিসাব করে কিবলা ঠিক করতে হবে। একই নিয়ম
দক্ষিণ মেরুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
আরেকটা ব্যাপার। অনেকেই গাড়ি,
বাস বা ট্রেনে নামাজ পড়েন। তারা কি করবেন? রাস্তা তো আঁকাবাঁকা। এ ক্ষেত্রে
নামাজ শুরুর সময়কার কিবলা ঠিক রাখলেই হবে। নামাজরত অবস্থায় কিবলা
পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে রাস্তার কারণে সেটা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নাই।
আর আজকাল অনেক অ্যাপ্লিকেশান/ সফটওয়্যার আছে যা দিয়ে সহজেই কিবলার দিক বের
করা যায়। তবে যদি একেবারেই সম্ভব না হয়, তাহলে সুবিধামত যে কোন দিকে ফিরে
পড়লেই সালাত আদায় হয়ে যাবে।[১৪]
এবার আসি wikiislam-এর বিখ্যাত সেই বিভ্রান্তিকর ছবি প্রসঙ্গে। নিচের ছবিটাই হল সেই বিভ্রান্তিকর ছবি-
কেস ১: তাদের দাবি- যেহেতু পৃথিবী গোলাকার তাই একেবারে কা’বার কাছাকাছি
ছাড়া যে কোন পয়েন্ট থেকে কিবলার দিকে মুখ করার অর্থ আকাশের দিকে মুখ করা!
নাস্তিক ভাইদের কাছে তাহলে একটা প্রশ্ন করি। আমাদের দেশ থেকে আমেরিকা আসলে
কোন দিকে? আপনি যদি বলেন পশ্চিম দিকে, তাহলে কিন্তু ভুল বলছেন। কারণ আপনি
সামনের দিকে আঙ্গুল তুললে সেটা তো হবে আকাশের দিকে, কারণ পৃথিবী তো
গোলাকার!! আশা করি উত্তর পেয়ে গেছেন। আমরা যে কোন direction-ই চিন্তা করি
পৃথিবীর surface বরাবর, আসমান বরাবর নয়।
কেস ২: এখানে তারা দাবি করে
কা’বার একদম opposite-এ কিবলা হবে মাটির ভেতর থেকে নিচে। তাদের এই দাবির
সাথে আরেকটু যোগ করি। শুধু একদম বিপরীত পাশে না, আরও অনেক জায়গা থেকেই
কিবলা মাটির দিক থেকে নিচে। 'প্রকৃতপক্ষে' কা’বামুখী হতে হলে বাংলাদেশের
মানুষদের আকাশের দিকে পা তুলে মাটির দিকে মুখ করতে হবে। এটা একটা উদ্ভট ও
অসম্ভব ব্যাপার। আল্লাহ্ কারও সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু চাপান না এবং মানুষকে
অদ্ভুতভাবে কষ্ট দেওয়াও আল্লাহর মর্জি না। বরং আল্লাহ্ মানুষের অন্তর
দেখেন এবং তার সাধ্যের ভিতরে কাজ দেন। এ কারণে কা’বামুখী হবার জন্য নিকটতম
রৈখিক দিকে (যেমন- বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমে) মুখ করতে হয়। বোধসম্পন্নরা এখানে
আল্লাহর অনুগ্রহ খুঁজে পায় এবং বক্রহৃদয়ের লোকেরা এখান থেকে আল্লাহ্
কিংবা রাসূল (সা)-এর ভুল খুঁজে পায়।
কেস ৩: এই ছবিতে তাদের দাবি
যেহেতু পৃথিবী গোলাকার, সেহেতু কা’বার দিকে মুখ ফেরার অর্থ হল একদিক থেকে
কা’বাকে পশ্চাৎদেশ দেখানো! একই কথা কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেউ
যদি আপনার পেছন দিকে থাকে, তার অর্থ সে ঘুরে এসে আসলে আপনাকে পশ্চাৎদেশ
দেখাচ্ছে! কি অদ্ভুত যুক্তি! এবার তাদের যুক্তি খণ্ডন করি। কা’বা ঘরের সাথে
যদি আপনার সামনাসামনি কোন যোগাযোগ না থাকে বা সামনে কোন পর্দা বা অন্তরায়
থাকে তাহলে আপনি কা’বার দিকে ফিরে যে কোন কিছুই করতে পারবেন। দেখুন
IslamQA-র ফতওয়া।[১২]
কেস ৪: সর্বশেষ চিত্রটা হল কা’বার antipode নিয়ে
(কোন কিছুর একদম opposite-কে antipode বলে)। এখানে নাকি সবদিক সমান, তাই
কা’বামুখী হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন দিক নাই। এইখানে এসে আমরা যে ব্যাপারটা
ভুলে যাই তা হল The antipode also has an antipode. কা’বা ঘরের ভেতর যে
কোন দিকে মুখ করেই সালাত আদায় করা যায়। আর সেই কা’বার antipode-এ যে কোন
দিকে মুখ করে নামায আদায় করতে দোষ কি? দাঁড়ান, এখনও কথা শেষ হয় নি।
প্রকৃতপক্ষে কা’বার antipode-এ কোন land area নেই। নিচের চিত্রটা দেখুন-
এটা অবস্থিত প্রশান্ত মহাসাগরে, পলিনেশিয়া এরিয়ার ভেতর। কেউ যদি
প্লেনে বা জাহাজেও থাকে, তাহলে তো চোখের নিমেষেই পার হয়ে যাবে। আর এই
পয়েন্ট ছেড়ে গেলেই তো আবার সর্বনিম্ন দূরত্বের সাধারণ নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
তারপরেও যদি কেউ কোনভাবে exact এখানে অবস্থান করতে পারে, তাহলেও তার জন্য
অসংখ্য direction থাকে না, কারণ পৃথিবী পুরোপুরি গোলাকার না। আর এজন্য
সর্বনিম্ন দূরত্ব হিসাব করলে তার কাছে দুইটা direction থাকে, উত্তর-পশ্চিম
এবং উত্তর-পূর্ব। আর এই antipode থেকে নিকটতম land area হল Tematagi.[১৩]
আর এই নিকটতম স্থলভাগ যেহেতু উত্তর-পশ্চিম direction অনুসরণ করে, তাই
সবথেকে ভাল হয় উত্তর-পশ্চিম দিকে ফিরে সালাত আদায় করা। আর যদি কোনভাবেই
কিবলা চিহ্নিত করা না যায় (যে কোন ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য), তাহলেও কোন সমস্যা
নাই। তখন যে কোন দিকে ফিরে নামায পড়লেই হবে। এই ব্যাপারে IslamQA-র ফতওয়া
আছে।[১৪]
এবার সর্বশেষ যে প্রশ্নটি আপনারা করতে পারেন সেটার উত্তরও
দিবো ইনশাল্লাহ্। ISS (International Space Station)-এ অবস্থানকারী কোন
মহাকাশচারী যদি নামাজ পড়তে চান তাহলে তিনি কিভাবে পড়বেন- এটাই তো? এই
ব্যাপারে সিদ্ধান্তের জন্য ২০০৬ সালে মালয়শিয়ান ন্যাশনাল স্পেস এজেন্সি
একটি কনফারেন্সের আয়োজন করে বিজ্ঞানী ও ধর্মীয় স্কলারদের নিয়ে।[১৫] এই
কনফেরেন্সে সিদ্ধান্ত হয় মহাকাশচারী তার ক্ষমতা অনুযায়ী কিবলা নির্ধারণ
করবে। সেটা চারটা স্টেপে প্রাধান্য পাবে। ১. কাবার দিকে মুখ করে ২. কাবার
প্রজেকশনের দিকে মুখ করে ৩. পৃথিবীর দিকে মুখ করে ৪. সুবিধামত যে কোন দিকে
মুখ করে। কিন্তু তবুও একটা সমস্যা থেকে যায়, ধরা যাক পৃথিবীর দিকে মুখ করেই
নামাজ শুরু করল। কিন্তু ঘূর্ণনের কারনে নামাজের মধ্যেই মুখ অন্য দিকে হয়ে
যেতে পারে, তখন? গাড়ি বা ট্রেনে চলার সময়ের মত এখানেও শুরুতে কিবলা ঠিক করে
নিলেই হবে, পরে পরিবর্তন হলেও কোন সমস্যা নেই।
আশা করি কিবলা নিয়ে আপনাদের বিভ্রান্তি দূর হয়েছে। আল্লাহ্ আমাদের সঠিক পথে থাকার এবং গভীরভাবে চিন্তা করার তাওফিক দান করুক।
12:00
Share:
0 komentar: