
যুদ্ধের ময়দানে সম্পদ অর্থাত গনিমতের বন্টনের ব্যাপারে নাস্তিকদের অপপ্রচারের শেষ নেই ৷ যারা নিজের মা, বোন, মেয়েকে বিয়ে করতে এক পায়ে দাড়িয়ে থাকে তারা রাসূলের সাঃ বন্টন নিয়ে কথা তুলে!! আসুন গনিমতের ব্যাপারে আলোচনা করি!
(1) পলাশী যুদ্ধে শেষ হতে না হতেই মুর্শিদাবাদের রাজকোষ হতে সকল সম্পদ ইংরেজরা নিয়ে যায় ৷ সার্জন ফোর্থের প্রদত্ত হিসেব মতে মণিমুক্তা হিরা জহরতের মূল্য বাদ দিয়ে, তৎকালীন মুদ্রায় ৬৮ কোটি টাকা ৷
পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরা একটা জাহাজ সাজিয়ে মহাসমারোহে ম্যানিংহাম সাহেবকে দিয়ে বিলাতে বিজয় বার্তা প্রেরণ করেছিলেন এবং সেনাপতি ক্লাইভ ধনরত্ন সাতশত সিন্দুকে বোঝাই করে নবদ্বীপে প্রেরণ করেছিলেন ৷
(2) রাজা টিপু সুলতানের রাজ্য থেকে প্রচুর সম্পদ নিয়ে যায় ব্রিটিশরা। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সঙ্গে যুদ্ধে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে নিহত হন টিপু সুলতান৷ পরাজিত সুলতানের শুধুমাত্র প্রাসাদ থেকেই প্রায় দেড় মিলিয়ন স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যায়, যেগুলো এক হাজারটি বস্তার মধ্যে ভর্তি ছিল। তাছাড়া প্রাসাদ থেকে ব্রিটিশরা স্বর্ণের সিংহাসন, হীরক খচিত তলোয়ার, স্বর্ণ-রৌপ্যের বাসন, বহু মূল্যবান রত্নাদি নিয়ে যায়। এই বিপুল সম্পদ বৃটেনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সৈনিকদের মধ্যে বিতরণ করা হলেও, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সম্পদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ব্রিটিশ রাজপরিবারের জন্য রেখে দেয়া হয়েছিল। টিপু সুলতানের বিশেষ বাদ্যযন্ত্র ‘বাজা’ তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ডিরেক্টরকে উপহার স্বরূপ দেয়া হয়েছিল, যা বর্তমানে ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট জাদুঘরে রাখা আছে।
তাছাড়া অন্যান্য যুদ্ধ হতে লব্ধ বিখ্যাত ময়ুর সিংহাসন এবং কোহিনুর হীরার কথা তো সবার জানা ৷
(3) ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যদের ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ- যার মূল্য ওই সময় ছিলো ২৭ হাজার কোটি টাকা, তার সবই মিত্রবাহিনী রেখে দেয় ৷
এরকম আরও শতশত উদাহরন দেয়া যাবে যেখানে পরাজিত সৈন্যদের সম্পদ বিজয়ী রাজা , সরকার বা দেশের বলে গ্রহন করা হয়েছে ৷
যদি এসকল সম্পদ শত্রু সৈন্যদের ফিরিয়ে দেয়া হয় তবে কি তারা আবার শক্তিশালী হয়ে একযোগে এই অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে হামলা চালাবে না??? তাই, এই সকল সম্পদ তাই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয় ৷ এটাই নিয়ম ৷
(4)এবার আসুন আলোচনা করি গনিমতের ব্যাপারে!
বদরের ময়দানে কুরাইশ সেনাদলের কাছ থেকে যে, গনীমতের সম্পদ লাভ করা হয়েছিল তা বন্টন করার ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে বিবাদ দেখা দিয়েছিল৷ তখন আল্লাহ ঘোষনা করেন,
1] يَسـَٔلونَكَ عَنِ الأَنفالِ ۖ قُلِ الأَنفالُ لِلَّهِ وَالرَّسولِ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصلِحوا ذاتَ بَينِكُم ۖ وَأَطيعُوا اللَّهَ وَرَسولَهُ إِن كُنتُم مُؤمِنينَ
[1] আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, গনীমতের হুকুম। বলে দিন, গণীমতের মাল হল আল্লাহর এবং রসূলের। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য কর, যদি ঈমানদার হয়ে থাক।( সূরা আল আনফাল)
যুদ্ধ প্রসংগে এটা ছিল একটা অনেক বড় ধরনের নৈতিক সংস্কার ৷ মুসলমানদের যুদ্ধ দুনিয়ার বস্তুগত স্বার্থ ও সম্পদ লাভ করার জন্য নয় বরং সত্যের নীতি অনুযায়ী দুনিয়ার নৈতিক ও তামাদ্দুনিক বিকৃতির সংস্কার সাধন করার জন্যেই তা হয়ে থাকে৷ আর এ যুদ্ধ নীতি বাধ্য হয়ে তখনই অবলম্বন করা হয় যখন প্রতিবন্ধক শক্তিগুলো স্বাভাবিক দাওয়াত ও প্রচার পদ্ধিতির মাধ্যমে সংস্কার সাধনের সমস্ত পথ রুদ্ধ করে দেয়৷কাজেই সংস্কারদের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকতে হবে উদ্দেশ্যের প্রতি ৷ উদ্দেশ্যের জন্যে সংগ্রাম করতে গিয়ে আল্লাহর পক্ষে থেকে পুরস্কার হিসেবে যেসব সম্পদ লাভ করা হয় সেদিকে তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকা উচিত নয়৷
এটাই ছিল আয়াতের মূল বিষয়বস্তু ৷
কিভাবে রাসূল সাঃ বন্টন করেন সম্পদ??
গনিমতকে 5 ভাগে ভাগ করা হয় ৷
(1) চারভাগ পায় সেই সকল সৈনিক যারা নিজের জীবন বিপন্ন করে যুদ্ধ করেছে ৷
(2) বাকি একভাগ আল্লাহ তায়ালা রাসূলকে সাঃ দিয়েছেন ৷ সেটাও 5 ভাগে বন্টিত হয়েছে ৷
( a) একভাগ রাসূলের স্ত্রী, সন্তানের জন্য এবং ভবিষ্যতে যুদ্ধের ঘোড়া ও সরঞ্জাম কেনার জন্য ৷
( b) একভাগ রাসূলের আত্মীয় স্বজনের জন্য ৷
(C) বাকি তিন ভাগ, ইয়াতীম ,গরীব এবং অসহায় লোকদের জন্য ৷
মূলত, আমরা দেখছি, আধুনিক কালেও যেসকল সৈন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করে তাদের পরিবর্তে সরকারের কোষাগারে শত্রুদের সম্পদ জমা করা হয় ৷ কিন্তু ইসলামী বিধান অনুযায়ী রাসূল সাঃ প্রায় সমস্ত সম্পদ যুদ্ধে অংশ গ্রহনকারি সৈন্য এবং গরীবদের মাঝে বন্টন করে দিয়ে ছিলেন!
এখানে তিনি কি কোন অন্যায় করেছেন?? কিন্তু আধুনিক কালের কিছু নাস্তিক রাসূলের সাঃ এই বন্টন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে!
রাসূলের কি করা উচিত ছিল?? সব নিজে নিয়ে যেতেন?? নাকি শত্রুদের দিয়ে দেয়া উচিত ছিল??
https://
16:00
Share:
0 komentar: