কোরানে আকাশ নিয়ে নাস্তিকদের অজ্ঞতা ও মিথ্যাচারের জবাবঃ
ছবিটি একটি মুভির দৃশ্য, এটি একটি জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকসান মুভি, নাম Avengers. যারা মুভিটি দেখেছেন তাদের নিশ্চয়ই এই দৃশ্যের কথা মনে আছে। এখানে দেখা যাচ্ছে আকাশে একটি ছিদ্র তৈরি হয়েছে। মুভিটি যখন আমরা দেখেছি, কারো কাছেই মনে হয়নি যে এটি একটি বৈজ্ঞানিক ভুল। কারন আমরা উক্ত ঘটনাটির ব্যাগ্রাউন্ড তথ্যটা জানি। মুভির কাহিনি অনুসারে আমরা দেখতে পাই এখানে দুটি ভিন্ন ওয়ার্ল্ড বা দুটি ভিন্ন ডাইমেনশনের দরজা ওপেন হয়েছে, যেখান থেকে অন্য মাত্রার প্রানীরা আমাদের মাত্রায় প্রবেশ করছে। আকাশে এটি এমনভাবে ওপেন হয়েছে যেন একটি ছিদ্র।
এবার কোরানের দুটি আয়াত দেখি,
আকাশ উম্মুক্ত হয়ে; তাতে বহু দরজা সৃষ্টি হবে। (৭৮:১৯)
যখন আকাশ ছিদ্রযুক্ত হবে (কোরান ৭৭:৯)
নাস্তিকরা এই আয়াত দুটিকে বৈজ্ঞানিক ভুল বলে প্রচার করে, তাদের মতে আকাশ শক্ত পদার্থ নয়, এবং তাতে ছিদ্র বা দরজা হওয়া সম্ভব নয়।
জবাবঃ
এখানেই নাস্তিকদের চিন্তা ও জ্ঞানের দৈন্যতা। এই দুটো আয়াতে কেয়ামতের সময়ের একটা কথা বলা হয়েছে। এখানে কেয়ামতের কথা বলা হয়েছে, আমরা জানি না সেসময় পরিস্থিতি কেমন হবে। আমাদের প্রচলিত ৪ মাত্রা ব্যাতীতও আরো মাত্রা রয়েছে। সেসময় বিভিন্ন মাত্রার সংঘর্ষে আমাদের প্রচলিত মাত্রায় ছিদ্র, দরজা বা Para dimensional Door সৃষ্টি হওয়া কি অস্বাভাবিক, যেমনটা এভেঞ্জার্স মুভিতে দেখানো হয়েছে।
একিসাথে নাস্তিকরা বোধহয় জীবনেও Wormhole এর কথা শুনে নাই। আলবার্ট আইনস্টাইন ও নাথান রোজেন ১৯৩৫ সালে গবেষনা করে দেখেন যে স্থান-কালের অভ্যন্তরে এক প্রকার সেতু ও গহবরের অস্তিত্ত্ব রয়েছে। এই পথসমুহকেই বলা হয় আইনস্টাইন রোজেন সেতু বা ওয়ার্মহোল। তত্ত্বীয়ভাবে এটি এমন একটি সংক্ষিপ্ত গমনপথ, দরজা কিংবা ছিদ্র যা দ্বারা স্থান কালের ভেতর দিয়ে মহাবিশ্বের এক স্থান থেকে দীর্ঘ দূরত্বে অন্য স্থানে ভ্রমন সম্ভব করে। https:// en.wikipedia.org /wiki/Wormhole
তো কেয়ামতের সময় আমাদের মহাশূন্যে ওয়ার্মহোল সৃষ্টি হওয়া কি অযৌক্তিক নাকি মুর্খ নাস্তিকদের খাতায় অবৈজ্ঞানিক ?
একিসাথে আকাশে ছিদ্র হবার আরো অনেক উপায় রয়েছে।
প্রথমে আকাশের সংজ্ঞাটা জেনে নিই, কারন অনেক মুর্খ নাস্তিক আবার কোরানকে ভুল প্রমান করতে গিয়ে বলে বসে যে, আকাশ বলে কোণ কিছুর অস্তিত্বই নেই। আকাশ শব্দটাই নাকি বৈজ্ঞানিক ভুল। আসলে তারা ইসলামকে ভুল প্রমান করতে কতখানি অজ্ঞতার পরিচয় দিতে পারে এটাই তার প্রমান।
আকাশের সংজ্ঞা হিসেবে উইকিপিডিয়াতে আছে,
The sky (or celestial dome) is everything that lies above the surface of the Earth, including the atmosphere and outer space.
https:// en.wikipedia.org /wiki/Sky
অর্থাৎ পৃথিবি ব্যাতীত সব কিছুই আকাশ। পৃথিবি পৃষ্ট হতে উপরে বায়ুমন্ডল ও তার বাইরের সব কিছুই আকাশ এর অন্তর্গত।
অর্থাৎ বায়ুমন্ডলও আকাশের অন্তর্গত, এবং এই বায়ুমন্ডোলের ওজনস্তরেও এমনকি ছিদ্র হতে পারে যাকে বলা বলা হয় Ozone Depletion
https:// en.wikipedia.org /wiki/ Ozone_depletion
hole in the ozone layer
এখন মুর্খ নাস্তিকরা কি বলবে ? আকাশে ছিদ্র অবৈজ্ঞানিক নাকি এগুলো না জেনে কোরানকে অবৈজ্ঞানিক বলা তাদের মুর্খতা?
নাস্তিকেরা আরো একটি আয়াত নিয়ে প্রশ্ন করে,
তারা কি তাদের উপরস্থিত তাদের আকাশের পানে দৃষ্টিপাত কর না আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোন ছিদ্রও নেই।"(৫০:৬)
জবাবঃ
নাস্তিকদের মতে এই আয়াতে আছে আকাশে কোণ ছিদ্র নেই, তারমানে নাকি কোরানে বলা হচ্ছে আকাশ শক্ত পদার্থ।
মূলত নাস্তিকদের অনেকগুলা হাস্যকর অভিযোগের মধ্যে এটা একটা। যেখানে বলা আছে ছিদ্র নেই, সেখানে নাকি বুঝানো হয়েছে আকাশ শক্ত পদার্থ। আমি তো সমুদ্রের দিকেও তাকিয়ে কাউকে বলতে পারি, এতে কোণ ছিদ্র নেই ? এরমানে কি আমি এটা বুঝাচ্ছি সমুদ্র ধাতব কিছু ? হাস্যকর।
তাদের আনিত আকাশ সংক্রান্ত তথাকথিত ভুলের আরো কিছু আয়াত,
তিনি আকাশ স্থির রাখেন,যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্টে পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি করুণাশীল, দয়াবান। (২২:৬৫)
আমি ইচ্ছা করলে তাদের সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা আকাশের কোন খণ্ড তাদের উপর পতিত করব। (৩৪:৯).
জবাবঃ
সাইন্স সম্পর্কে অজ্ঞ মুর্খরা এখানেও বৈজ্ঞানিক ভুল দেখবে, বলবে আকাশ তো শক্ত পদার্থ নয়, এবং তা মানুষের মাথায় ফেলাও সম্ভব নয়। তা স্থির থাকে না ইত্যাদি।
প্রথমত, কোরান (২২:৬৫) এ অনুবাদটি তারা ভুল প্রদান করে, এখানে হবে, “তিনি আকাশকে নিবৃত রাখেন, যাতে তা ভূপৃষ্টে পতিত না হয়।” সহী ইন্টারন্যাশনাল থেকে অনুবাদ চেক করুন https:// quran.com/22/65
নিবৃত আর স্থির রাখা দুটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
যাক গে, আমরা আগেই জেনেছি আকাশ বলতে কি বোঝা যায়, ভূপৃষ্ট ব্যাতীত সকল কিছুই অর্থাৎ গ্রহ, নক্ষত্র, বা স্পেস পার্টিকেল সব কিছুই আকাশের অন্তর্গত। আর আমরা জানি যে গ্রাভিটেশনাল ফোর্স দ্বারা এই সব কিছুই নিয়ন্ত্রিত। যদি তা না হত তবে যেকোন সময় গ্রহ উপগ্রহের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হত, যেকোন গ্রহ বা গ্রহানু আমাদের পৃথিবীর উপর এসে পড়তে পারত ও পৃথিবী ধংস হয়ে যেত। তাই কোরানে যথার্থই বলা হয়েছে, তিনি আকাশকে নিবৃত রাখেন যাতে তা আমাদের উপরে এসে না পড়ে।
একিসাথে কেয়ামতের সময় ন্যাচারাল অর্ডার ব্যাহত হবে। মহাবিশ্ব তখন সংকুচিত হবে, ধংস হবে। তাই দ্বিতীয় আয়াতটি কোরান (৩৪:৯) অনুসারে আকাশের কোণ অংশ অর্থাৎ গ্রহানু, উল্কা বা মহাবৈশ্বিক পার্টিকেল পৃথিবীর উপর আচড়ে পড়া খুবই যুক্তিযুক্ত। কোরানও সেটাই বলেছে।
একিসাথে আমরা যদি সহী ইনটারন্যাশনাল এর অনুবাদ দেখি, তো দেখতে পাব, কথাটি আরো স্পষ্ট, এখানে বলা আছে,
let fall upon them fragments from the sky
https:// quran.com/34/9
অর্থাৎ আকাশের টুকরো নয় বরং আকাশ থেকে টুকরো ফেলা হবে , যেটা স্পষ্টভাবে গ্রহানু বা Asteroid কে নির্দেশ করে।
Asteroid
নাস্তিকদের অভিযুক্ত আয়াত,
"আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে,"(২১:৩২)
জবাবঃ
আকাশ সুরক্ষিত ছাদ এটা নাকি আবার বৈজ্ঞানিক ভুল। মুর্খরা ছাদ মানেই কঠিন কিছু ধরে নিয়েছে। ছাদ মানে এমন কিছু যা আমাদের রক্ষা করে উপর হতে, এবং নিসন্দেহে আকাশ আমাদের সুরক্ষিত ছাদও। আমাদের বায়ুমন্ডল এর ওজনস্তর ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্নি থেকে আমাদের প্রতিনিয়ত রক্ষা করে। অর্থাৎ আকাশ আমাদের নিকট একিসাথে সুরক্ষার ছাদও। আমরা প্রায়শই পরিবারের অভিভাবককে, বিশেষ করে বাবাকে বলি, তিনি পরিবারের সুরক্ষার ছাদ কিংবা ঢাল। কারন তিনি বিপদ আপদ থেকে পরিবারকে রক্ষা করেন। এরমানে কি আমরা বুঝাই যে বাবা ধাতব পদার্থের তৈরি। চিন্তা চেতনায় প্রতিবন্ধী নাস্তিকদের থেকে এমন ধারনাই আশা করা যায়।
সেইসাথে নাস্তিকদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে গেলাম, পারলে কোরান থেকে একটা মাত্র লাইন বের করে দেখাক যেখানে লেখা আছে আকাশ শক্ত পদার্থ দিয়ে তৈরি। ওপেন চ্যালেঞ্জ।
এরপরে কোরানে আকাশ সংক্রান্ত সবচেয়ে বহুল প্রচলিত অভিযোগ, সেটি হচ্ছে ৭ আকাশ।
৭ আকাশের বক্তব্য রয়েছে, কোরান (৬৭:৩-৫) (৭১: ১৫-১৬) (৪১:১২) সহ বিভিন্ন জায়গায়।
জবাবঃ
৭ আকাশ মোটেও কোণ বৈজ্ঞানিক ভুল নয়, বরং এটি কোরানের একটি মিরাকল। আকাশের সংজ্ঞা আমরা আগেই পেয়েছি, পৃথিবি ব্যাতীত সব কিছুই আকাশ। অর্থাৎ পুরো আকাশ বলতে বুঝায় পৃথিবী ব্যাতীত পুরো মহাবিশ্বকে। আর কোয়ান্টাম সাইন্স অনুসারে আমাদের এরকম মহাবিশ্বই একমাত্র নয়, বরং রয়েছে একাধিক। এখানে চলে আসে মাল্টিভার্স থিওরী, যা বলে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব একটি নয়, অসংখ্য। আমাদের মহাবিশ্ব যদি কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মধ্য দিয়ে স্থান-কালের শূন্যতার ভিতর দিয়ে আবির্ভূত হয়ে থাকে, তবে এই পুরো প্রক্রিয়াটি কিন্তু একাধিকবার ঘটতে পারে, এবং হয়ত বাস্তবে ঘটেছেও। ধারণা করা হয় যে, ইনফ্লেশনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত মহাজাগতিক বুদ্বুদ থেকে আমাদের মহাবিশ্বের মতই অসংখ্য মহাবিশ্ব তৈরী হয়েছে, যেগুলো একটা অপরটা থেকে সংস্পর্শবিহীন অবস্থায় দূরে সরে গেছে। এ ধরনের অসংখ্য মহাবিশ্বের একটিতেই হয়ত আমরা অবস্থান করছি। আর এরকম অগনিত মহাবিশ্ব বা আকাশ রয়েছে আমাদের দৃশ্যমান আকাশ বা মহাবিশ্বের বাইরে।
তবে এখানে আবার নাস্তিকরা প্রশ্ন করবে যে, মাল্টিভার্স তত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব ৭ টি নয়, বরং অগনিত। কিন্তু কোরান তো বলল মাত্র ৭ টির কথা ?
এখানে জবাব হচ্ছে, আরবীতে ৭ শব্দটির একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে আরবীতে ৭ অগনিত সংখ্যাকে নির্দেশ করে।
যেমন (Quran 65:12 ) এ Dr. Kamal Omar অনুবাদ করেছেন,
65:12
Allah is That Who created seven (or many) heavens and of the earth the like thereof (i.e., seven or many).
Dr. Mohammad Tahir-ul-Qadri Quran 71:15 এ অনুবাদ করেছেন,
Have you not seen how Allah has created seven (or many) heavenly spheres corresponding to one another (layer upon layer)?
অর্থাৎ তারা উভয়ই ৭ কে শুধু সেভেন নয়, বরং Many ও অনুবাদ করেছেন।
একিসাথে ৭ আকাশের জবাব আরো একভাবে দেয়া যায় তা হচ্ছে কোরানে এখানে যে শব্দটি এসেছে তা হচ্ছে ‘সামাওয়াত’ ‘সামাওয়াতিন’ ইত্যাদি, প্রচলিত সকল অনুবাদকই যার অনুবাদ Sky নয় বরং Heaven করেছেন।
http:// corpus.quran.com / translation.jsp? chapter=67&vers e=3
তাই আরেকভাবে বলা যায়, এখানে ৭ স্বর্গের কথা বলা হয়েছে, আমাদের আকাশের কথা নয়। আর স্বর্গ নরক যেহেতু আপাতদৃষ্টিতে দৃশ্যমান নয় তাই এটী ভুল বা শুদ্ধ প্রমান অপ্রমানের কোণ উপায়ও নেই।
Answerd by Md Rafat Rahman
ছবিটি একটি মুভির দৃশ্য, এটি একটি জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকসান মুভি, নাম Avengers. যারা মুভিটি দেখেছেন তাদের নিশ্চয়ই এই দৃশ্যের কথা মনে আছে। এখানে দেখা যাচ্ছে আকাশে একটি ছিদ্র তৈরি হয়েছে। মুভিটি যখন আমরা দেখেছি, কারো কাছেই মনে হয়নি যে এটি একটি বৈজ্ঞানিক ভুল। কারন আমরা উক্ত ঘটনাটির ব্যাগ্রাউন্ড তথ্যটা জানি। মুভির কাহিনি অনুসারে আমরা দেখতে পাই এখানে দুটি ভিন্ন ওয়ার্ল্ড বা দুটি ভিন্ন ডাইমেনশনের দরজা ওপেন হয়েছে, যেখান থেকে অন্য মাত্রার প্রানীরা আমাদের মাত্রায় প্রবেশ করছে। আকাশে এটি এমনভাবে ওপেন হয়েছে যেন একটি ছিদ্র।
এবার কোরানের দুটি আয়াত দেখি,
আকাশ উম্মুক্ত হয়ে; তাতে বহু দরজা সৃষ্টি হবে। (৭৮:১৯)
যখন আকাশ ছিদ্রযুক্ত হবে (কোরান ৭৭:৯)
নাস্তিকরা এই আয়াত দুটিকে বৈজ্ঞানিক ভুল বলে প্রচার করে, তাদের মতে আকাশ শক্ত পদার্থ নয়, এবং তাতে ছিদ্র বা দরজা হওয়া সম্ভব নয়।
জবাবঃ
এখানেই নাস্তিকদের চিন্তা ও জ্ঞানের দৈন্যতা। এই দুটো আয়াতে কেয়ামতের সময়ের একটা কথা বলা হয়েছে। এখানে কেয়ামতের কথা বলা হয়েছে, আমরা জানি না সেসময় পরিস্থিতি কেমন হবে। আমাদের প্রচলিত ৪ মাত্রা ব্যাতীতও আরো মাত্রা রয়েছে। সেসময় বিভিন্ন মাত্রার সংঘর্ষে আমাদের প্রচলিত মাত্রায় ছিদ্র, দরজা বা Para dimensional Door সৃষ্টি হওয়া কি অস্বাভাবিক, যেমনটা এভেঞ্জার্স মুভিতে দেখানো হয়েছে।
একিসাথে নাস্তিকরা বোধহয় জীবনেও Wormhole এর কথা শুনে নাই। আলবার্ট আইনস্টাইন ও নাথান রোজেন ১৯৩৫ সালে গবেষনা করে দেখেন যে স্থান-কালের অভ্যন্তরে এক প্রকার সেতু ও গহবরের অস্তিত্ত্ব রয়েছে। এই পথসমুহকেই বলা হয় আইনস্টাইন রোজেন সেতু বা ওয়ার্মহোল। তত্ত্বীয়ভাবে এটি এমন একটি সংক্ষিপ্ত গমনপথ, দরজা কিংবা ছিদ্র যা দ্বারা স্থান কালের ভেতর দিয়ে মহাবিশ্বের এক স্থান থেকে দীর্ঘ দূরত্বে অন্য স্থানে ভ্রমন সম্ভব করে। https://
তো কেয়ামতের সময় আমাদের মহাশূন্যে ওয়ার্মহোল সৃষ্টি হওয়া কি অযৌক্তিক নাকি মুর্খ নাস্তিকদের খাতায় অবৈজ্ঞানিক ?
একিসাথে আকাশে ছিদ্র হবার আরো অনেক উপায় রয়েছে।
প্রথমে আকাশের সংজ্ঞাটা জেনে নিই, কারন অনেক মুর্খ নাস্তিক আবার কোরানকে ভুল প্রমান করতে গিয়ে বলে বসে যে, আকাশ বলে কোণ কিছুর অস্তিত্বই নেই। আকাশ শব্দটাই নাকি বৈজ্ঞানিক ভুল। আসলে তারা ইসলামকে ভুল প্রমান করতে কতখানি অজ্ঞতার পরিচয় দিতে পারে এটাই তার প্রমান।
আকাশের সংজ্ঞা হিসেবে উইকিপিডিয়াতে আছে,
The sky (or celestial dome) is everything that lies above the surface of the Earth, including the atmosphere and outer space.
https://
অর্থাৎ পৃথিবি ব্যাতীত সব কিছুই আকাশ। পৃথিবি পৃষ্ট হতে উপরে বায়ুমন্ডল ও তার বাইরের সব কিছুই আকাশ এর অন্তর্গত।
অর্থাৎ বায়ুমন্ডলও আকাশের অন্তর্গত, এবং এই বায়ুমন্ডোলের ওজনস্তরেও এমনকি ছিদ্র হতে পারে যাকে বলা বলা হয় Ozone Depletion
https://
hole in the ozone layer
এখন মুর্খ নাস্তিকরা কি বলবে ? আকাশে ছিদ্র অবৈজ্ঞানিক নাকি এগুলো না জেনে কোরানকে অবৈজ্ঞানিক বলা তাদের মুর্খতা?
নাস্তিকেরা আরো একটি আয়াত নিয়ে প্রশ্ন করে,
তারা কি তাদের উপরস্থিত তাদের আকাশের পানে দৃষ্টিপাত কর না আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোন ছিদ্রও নেই।"(৫০:৬)
জবাবঃ
নাস্তিকদের মতে এই আয়াতে আছে আকাশে কোণ ছিদ্র নেই, তারমানে নাকি কোরানে বলা হচ্ছে আকাশ শক্ত পদার্থ।
মূলত নাস্তিকদের অনেকগুলা হাস্যকর অভিযোগের মধ্যে এটা একটা। যেখানে বলা আছে ছিদ্র নেই, সেখানে নাকি বুঝানো হয়েছে আকাশ শক্ত পদার্থ। আমি তো সমুদ্রের দিকেও তাকিয়ে কাউকে বলতে পারি, এতে কোণ ছিদ্র নেই ? এরমানে কি আমি এটা বুঝাচ্ছি সমুদ্র ধাতব কিছু ? হাস্যকর।
তাদের আনিত আকাশ সংক্রান্ত তথাকথিত ভুলের আরো কিছু আয়াত,
তিনি আকাশ স্থির রাখেন,যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্টে পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি করুণাশীল, দয়াবান। (২২:৬৫)
আমি ইচ্ছা করলে তাদের সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা আকাশের কোন খণ্ড তাদের উপর পতিত করব। (৩৪:৯).
জবাবঃ
সাইন্স সম্পর্কে অজ্ঞ মুর্খরা এখানেও বৈজ্ঞানিক ভুল দেখবে, বলবে আকাশ তো শক্ত পদার্থ নয়, এবং তা মানুষের মাথায় ফেলাও সম্ভব নয়। তা স্থির থাকে না ইত্যাদি।
প্রথমত, কোরান (২২:৬৫) এ অনুবাদটি তারা ভুল প্রদান করে, এখানে হবে, “তিনি আকাশকে নিবৃত রাখেন, যাতে তা ভূপৃষ্টে পতিত না হয়।” সহী ইন্টারন্যাশনাল থেকে অনুবাদ চেক করুন https://
নিবৃত আর স্থির রাখা দুটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
যাক গে, আমরা আগেই জেনেছি আকাশ বলতে কি বোঝা যায়, ভূপৃষ্ট ব্যাতীত সকল কিছুই অর্থাৎ গ্রহ, নক্ষত্র, বা স্পেস পার্টিকেল সব কিছুই আকাশের অন্তর্গত। আর আমরা জানি যে গ্রাভিটেশনাল ফোর্স দ্বারা এই সব কিছুই নিয়ন্ত্রিত। যদি তা না হত তবে যেকোন সময় গ্রহ উপগ্রহের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হত, যেকোন গ্রহ বা গ্রহানু আমাদের পৃথিবীর উপর এসে পড়তে পারত ও পৃথিবী ধংস হয়ে যেত। তাই কোরানে যথার্থই বলা হয়েছে, তিনি আকাশকে নিবৃত রাখেন যাতে তা আমাদের উপরে এসে না পড়ে।
একিসাথে কেয়ামতের সময় ন্যাচারাল অর্ডার ব্যাহত হবে। মহাবিশ্ব তখন সংকুচিত হবে, ধংস হবে। তাই দ্বিতীয় আয়াতটি কোরান (৩৪:৯) অনুসারে আকাশের কোণ অংশ অর্থাৎ গ্রহানু, উল্কা বা মহাবৈশ্বিক পার্টিকেল পৃথিবীর উপর আচড়ে পড়া খুবই যুক্তিযুক্ত। কোরানও সেটাই বলেছে।
একিসাথে আমরা যদি সহী ইনটারন্যাশনাল এর অনুবাদ দেখি, তো দেখতে পাব, কথাটি আরো স্পষ্ট, এখানে বলা আছে,
let fall upon them fragments from the sky
https://
অর্থাৎ আকাশের টুকরো নয় বরং আকাশ থেকে টুকরো ফেলা হবে , যেটা স্পষ্টভাবে গ্রহানু বা Asteroid কে নির্দেশ করে।
Asteroid
নাস্তিকদের অভিযুক্ত আয়াত,
"আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে,"(২১:৩২)
জবাবঃ
আকাশ সুরক্ষিত ছাদ এটা নাকি আবার বৈজ্ঞানিক ভুল। মুর্খরা ছাদ মানেই কঠিন কিছু ধরে নিয়েছে। ছাদ মানে এমন কিছু যা আমাদের রক্ষা করে উপর হতে, এবং নিসন্দেহে আকাশ আমাদের সুরক্ষিত ছাদও। আমাদের বায়ুমন্ডল এর ওজনস্তর ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্নি থেকে আমাদের প্রতিনিয়ত রক্ষা করে। অর্থাৎ আকাশ আমাদের নিকট একিসাথে সুরক্ষার ছাদও। আমরা প্রায়শই পরিবারের অভিভাবককে, বিশেষ করে বাবাকে বলি, তিনি পরিবারের সুরক্ষার ছাদ কিংবা ঢাল। কারন তিনি বিপদ আপদ থেকে পরিবারকে রক্ষা করেন। এরমানে কি আমরা বুঝাই যে বাবা ধাতব পদার্থের তৈরি। চিন্তা চেতনায় প্রতিবন্ধী নাস্তিকদের থেকে এমন ধারনাই আশা করা যায়।
সেইসাথে নাস্তিকদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে গেলাম, পারলে কোরান থেকে একটা মাত্র লাইন বের করে দেখাক যেখানে লেখা আছে আকাশ শক্ত পদার্থ দিয়ে তৈরি। ওপেন চ্যালেঞ্জ।
এরপরে কোরানে আকাশ সংক্রান্ত সবচেয়ে বহুল প্রচলিত অভিযোগ, সেটি হচ্ছে ৭ আকাশ।
৭ আকাশের বক্তব্য রয়েছে, কোরান (৬৭:৩-৫) (৭১: ১৫-১৬) (৪১:১২) সহ বিভিন্ন জায়গায়।
জবাবঃ
৭ আকাশ মোটেও কোণ বৈজ্ঞানিক ভুল নয়, বরং এটি কোরানের একটি মিরাকল। আকাশের সংজ্ঞা আমরা আগেই পেয়েছি, পৃথিবি ব্যাতীত সব কিছুই আকাশ। অর্থাৎ পুরো আকাশ বলতে বুঝায় পৃথিবী ব্যাতীত পুরো মহাবিশ্বকে। আর কোয়ান্টাম সাইন্স অনুসারে আমাদের এরকম মহাবিশ্বই একমাত্র নয়, বরং রয়েছে একাধিক। এখানে চলে আসে মাল্টিভার্স থিওরী, যা বলে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব একটি নয়, অসংখ্য। আমাদের মহাবিশ্ব যদি কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মধ্য দিয়ে স্থান-কালের শূন্যতার ভিতর দিয়ে আবির্ভূত হয়ে থাকে, তবে এই পুরো প্রক্রিয়াটি কিন্তু একাধিকবার ঘটতে পারে, এবং হয়ত বাস্তবে ঘটেছেও। ধারণা করা হয় যে, ইনফ্লেশনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত মহাজাগতিক বুদ্বুদ থেকে আমাদের মহাবিশ্বের মতই অসংখ্য মহাবিশ্ব তৈরী হয়েছে, যেগুলো একটা অপরটা থেকে সংস্পর্শবিহীন অবস্থায় দূরে সরে গেছে। এ ধরনের অসংখ্য মহাবিশ্বের একটিতেই হয়ত আমরা অবস্থান করছি। আর এরকম অগনিত মহাবিশ্ব বা আকাশ রয়েছে আমাদের দৃশ্যমান আকাশ বা মহাবিশ্বের বাইরে।
তবে এখানে আবার নাস্তিকরা প্রশ্ন করবে যে, মাল্টিভার্স তত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব ৭ টি নয়, বরং অগনিত। কিন্তু কোরান তো বলল মাত্র ৭ টির কথা ?
এখানে জবাব হচ্ছে, আরবীতে ৭ শব্দটির একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে আরবীতে ৭ অগনিত সংখ্যাকে নির্দেশ করে।
যেমন (Quran 65:12 ) এ Dr. Kamal Omar অনুবাদ করেছেন,
65:12
Allah is That Who created seven (or many) heavens and of the earth the like thereof (i.e., seven or many).
Dr. Mohammad Tahir-ul-Qadri Quran 71:15 এ অনুবাদ করেছেন,
Have you not seen how Allah has created seven (or many) heavenly spheres corresponding to one another (layer upon layer)?
অর্থাৎ তারা উভয়ই ৭ কে শুধু সেভেন নয়, বরং Many ও অনুবাদ করেছেন।
একিসাথে ৭ আকাশের জবাব আরো একভাবে দেয়া যায় তা হচ্ছে কোরানে এখানে যে শব্দটি এসেছে তা হচ্ছে ‘সামাওয়াত’ ‘সামাওয়াতিন’ ইত্যাদি, প্রচলিত সকল অনুবাদকই যার অনুবাদ Sky নয় বরং Heaven করেছেন।
http://
তাই আরেকভাবে বলা যায়, এখানে ৭ স্বর্গের কথা বলা হয়েছে, আমাদের আকাশের কথা নয়। আর স্বর্গ নরক যেহেতু আপাতদৃষ্টিতে দৃশ্যমান নয় তাই এটী ভুল বা শুদ্ধ প্রমান অপ্রমানের কোণ উপায়ও নেই।
Answerd by Md Rafat Rahman
09:25
Share:
0 komentar: